অগ্নিঝরা মার্চের দ্বাদশতম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১২ মার্চ প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল গোটা বাংলা। পরাধীনতার শেকল ছেঁড়ার অদম্য নেশায় দুরন্ত-দুর্বার বীর বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ছাত্র-জনতার সঙ্গে রাজপথে নেমে আসেন পেশাজীবীরাও। সরকারি, আধা-সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা এবং সরকারি-বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি ও যানবাহনে কালো পতাকা উড়ানো অব্যাহত থাকে।

লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনে পূর্ববাংলায় থাকা পাকিস্তানি সামরিক জান্তা দমে যেতে থাকে। নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরাও তখন কণ্ঠ মেলাতে শুরু করেছেন। বগুড়া জেলখানা ভেঙে ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যান। কারারক্ষীদের গুলিতে একজন কয়েদি নিহত এবং ১৫ জন আহত হন।

১৯৭১ সালের ১২ মার্চ ময়মনসিংহে জনসভায় ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন। এদেশের জন্য পাঠানো খাদ্যবোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি পাঠানোর ঘটনায় এক বিবৃতিতে প্রাদেশিক পরিষদের আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন।

লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণ-ঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, দোষ হলো লাহোরে কিন্তু বুলেট বর্ষিত হল ঢাকায়। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসাবে নয়। পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য একটিমাত্র পথ খোলা রয়েছে। আর তা হলো-শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। এক বিবৃতিতে ন্যাপের মহাসচিব সিআর আসলাম বলেন, দেশের বর্তমান সংকটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। এক্ষেত্রে ভুট্টোও নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভুট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতার লিপ্সাই রাজনৈতিক সংকটকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে। জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন।

রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।