মার্কিন বাজারে রপ্তানিতে শীর্ষে
যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে পাঁচ দেশের পোশাক খাত
বাংলাদেশের শুনানি ১১ মার্চ, বক্তব্য দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ * তদন্তে বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও কর্মপরিবেশ উন্নতির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান বিজিএমইএর
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের পোশাক খাত, ফাইল ছবি
বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির বাজার দখল করে রেখেছে। অন্য চারটি দেশ হলো ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়া। এই পাঁচটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে কীভাবে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে এবং তারা কীভাবে প্রতিযোগিতা করছে-তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করছে যুক্তরাষ্ট্র। তদন্ত প্রতিবেদনে এসব দেশের শ্রমিকদের কর্মপরিবেশসহ সামগ্রিক বিষয় মূল্যায়ন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি) পাঁচটি দেশের পোশাক খাত নিয়ে ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় ৭ মার্চ এই তদন্ত শুরু করবে। বাংলাদেশের শুনানি হবে ১১ মার্চ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রি-হিয়ারিংয়ের রিপ্লাই দেওয়া হয়েছে। আমাদের রেসপন্স শেয়ার করেছি। ভার্চুয়ালি ১১ মার্চ শুনানিতে যুক্ত হব। শুনানির পরও ২২ মার্চ পর্যন্ত লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা যাবে। পরে ৩০ আগস্ট ইউএসআইটিসি তদন্ত প্রতিবেদনটি বাণিজ্য প্রতিনিধির কাছে জমা দেবে। খবর বিবিসি বাংলার।
বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ কীভাবে এবং কেন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে প্রতিযোগিতাপূর্ণ হলো-তা জানার চেষ্টা করা হবে ইউএসআইটিসির এই তদন্তে। বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। যদিও গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ অনেক কমেছে।
গত বছর বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশ, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মজুরি, ট্রেড ইউনিয়নসহ নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে তাগাদা দিয়েছিল। এসব বিষয়ও তদন্তে প্রাধান্য পাবে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মালিকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে যে হারে উৎপাদন খরচ বেড়েছে সে হারে ক্রেতারা মূল্য দিচ্ছে না। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক খাতের সামগ্রিক কর্মপরিবেশের উন্নতি হয়েছে বলে তারা জানান। ফলে এসব বিষয়ও তদন্তে বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই তদন্ত কমিটিকে শুনানি-পূর্ব প্রতিবেদন দিয়েছে পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ। বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদ উল্লাহ আজিম মনে করেন বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলার জন্য এ তদন্ত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে গার্মেন্টশিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ সরকার যাতে শ্রমিকদের ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে’ তদন্তে ব্যবহার না করে, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার।
পোশাক খাতে মার্কিন তদন্ত কেন : যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারী বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশে ইউএসআইটিসি তদন্ত শুরু করেছে। একই সঙ্গে পোশাক খাতের পরিস্থিতিও এই তদন্তে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বাংলাদেশের শুনানি হবে ১১ মার্চ। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে।
যুক্তরাষ্ট্র কেন এ বিষয়ে তদন্ত করছে সে প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সারা বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে আমদানি করত, এত বছর তাদের এভারেজ ইউনিট প্রাইস থেকে আমাদের কম থাকত। এখন আমাদের এভারেজ ইউনিট প্রাইস বেশি। কিন্তু এটা কোনোভাবেই প্রমাণ করে না যে, আমরা কম দামে সেখানে পণ্য দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের উৎপাদন খরচের চেয়ে পাকিস্তান ও চায়নায় খরচ অনেক কম। কিন্তু চীন এটার মধ্যে নেই। কিন্তু এর কী কারণ থাকতে পারে জানি না। তবে আমরা রেসপন্স করেছি, বলেন ফারুক হাসান।
শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়া হলে তা ‘প্রতিযোগিতাবিরোধী’ বলার সুযোগ থাকে। কিন্তু ১ ডিসেম্বর থেকে ৫৬ শতাংশের বেশি মজুরি বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এখন দায়িত্ব এটা নিশ্চিত করা যাতে আমরা ফেয়ার প্রাইস পাই। তাদের ক্রেতারা যাতে ন্যায্যমূল্য দেয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনে শুনানি-পূর্ব যে প্রতিবেদন বিজিএমইএ দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উৎপাদন খরচ অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম ২৫ শতাংশ, গ্যাসের দাম ২৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ডিজেলের দাম ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পণ্য পরিবহনে এর প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই তদন্ত কমিটি প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতির পাশাপাশি সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে কাঠামোগত পার্থক্যগুলোর সামগ্রিক মূল্যায়ন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছে বিজিএমইএ।
পোশাক খাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই তদন্তের পরবর্তী প্রভাব কী হতে পারে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, আমরা মনে করি না এর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে। কারণ কোনোকালেই যুক্তরাষ্ট্রে আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাইনি। এখনো নেই, আগামীতেও পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। তারপরও তাদের সঙ্গে কথা বললে আমরা এই তদন্তের উদ্দেশ্য বুঝতে পারব। আমরাও জানতে চাই। কারণ তারা ডিটেইলস কিছু বলেনি।
বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশসহ অন্যান্য বিষয় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করেন পোশাক খাতের এই শিল্প মালিক। তিনি বলেন, আমরা মনে করছি আমরা ফেয়ার ডিল করছি। আমাদের সব কিছু প্রপার আছে। কারণ আমাদের এখানে চাইল্ড লেবার নেই, বন্দি কর্মী নেই যেটা চায়নায় আছে। বরং আমরা অনেক বেশি বেটার পজিশনে আছি বলে মনে করি। তবে বাংলাদেশের ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রম পরিবেশ, শ্রম আইনের বিষয়গুলো এই তদন্তে শুনানিতে আসবে কিনা জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এসব বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু জানায়নি।
বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদ উল্লাহ আজিম বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রেসার দেওয়ার জন্য এই তদন্ত করা হচ্ছে। এটা মোস্টলি একটা পলিটিক্যাল ব্যাপার। যদি বেশি চাপিয়ে দেওয়া হয় তবে অন্যায় হবে। বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। কারণ এই খাতে আমাদের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। এই তদন্তে মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রম পরিবেশ, শ্রমিক কল্যাণ, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানান তিনি।