কাজ এগিয়ে রাখবে আ.লীগ
ঈদের পর মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনের সম্মেলন
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠন ও তৃণমূলে নেতাকর্মীদের বিরোধ মেটাতে ঢাকায় ডাকা হবে সংশ্লিষ্টদের
হাসিবুল হাসান
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফের সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দল গোছানোসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আনতে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, মহানগর ও উপজেলায় সম্মেলন করবে ক্ষমতাসীনরা। একই সঙ্গে কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার কাজও চলবে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পরিকল্পনাও রয়েছে। ঈদুলফিতরের পর এসব শুরু হবে। তবে এর আগে প্রস্তুতি হিসাবে রমজানব্যাপী জোর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠন ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যকার বিরোধ মেটাতে ঢাকায় ডাকা হবে সংশ্লিষ্টদের। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ইতোমধ্যে মাঠেও নেমেছেন দলের কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা জানিয়েছেন, রমজানে সাংগঠনিক কাজ এগিয়ে রেখে ঈদের পর ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করবেন তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক যুগান্তরকে বলেন, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, সেগুলোর সম্মেলন করতে আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন আমাদের কার্যক্রম শুরু করব। যারা বিভাগের দায়িত্বে আছি, আমরাও সংশ্লিষ্ট নেতাদের ডেকে কথা বলব। যেহেতু রমজান একেবারে নিকটে, ফলে এর মধ্যে হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু রমজানের পর আমরা ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞ শুরু করব।
জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জন্ম নেওয়া অন্তর্কোন্দল দূর করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কয়েকটি জেলাকে ঢাকায় বৈঠকের জন্য সম্ভাব্য তারিখও দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এসব বৈঠক হবে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব ইউনিটের নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তবে পরে সভাটি স্থগিত করা হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন যুগান্তরকে জানান, শিগ্গিরই বৈঠকটি হবে।
দলীয় সূত্রমতে, একইভাবে অন্যান্য মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরও ঢাকায় ডাকা হবে। বিশেষ করে অন্তর্কোন্দল বেশি-এমন জেলা বা উপজেলা নেতাদের আগে ডাকা হবে। এছাড়া সম্মেলন বাকি আছে বা সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেই জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কোন্দল নিরসন ও সম্মেলন বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। এসব কাজ রোজার মাসে যতটা সম্ভব এগিয়ে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে ৩০টির বেশি জেলা-উপজেলায় কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সম্মেলন হয়নি। আর ১৮টি জেলা ও মহানগরে সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে খোদ রাজধানীতেই বেহাল অবস্থা আওয়ামী লীগের। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছে ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। তিন বছর মেয়াদি এ কমিটির মেয়াদ ২০২২ সালের নভেম্বরে শেষ হলেও এখনো নতুন কাউন্সিল হয়নি। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ৫০টি থানা ও ১৪০টি ওয়ার্ডে সম্মেলন হলেও বারবার তাগাদার পরও কমিটিই ঘোষণা করা হয়নি।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। ইতোমধ্যে মেয়াদ শেষ হয়েছে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের। এসব সংগঠনের বেশির ভাগের তৃণমূলও একেবারেই অগোছাল। যুবলীগের সর্বশেষ জাতীয় সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর। ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে যুবলীগ। তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। জেলা, মহানগর, উপজেলা পর্যায়েও অনেক সম্মেলন বাকি। সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের কমিটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। এ দুই অংশে শীর্ষ চার নেতার তিনজনই ভারপ্রাপ্ত।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয় ২০১৯ সালের নভেম্বরে। এ সংগঠনেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে। যদিও এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে তৃণমূলের অনেক ইউনিট। কৃষক লীগের সম্মেলন হয় ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর। এর প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের অক্টোবরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয় সংগঠনটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনটির মেয়াদও শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে তিন বছর মেয়াদি এ কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে একেবারেই অগোছাল আওয়ামী লীগের এই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। এছাড়া তাঁতী লীগ ও মৎস্যজীবী লীগেরও একই অবস্থা।
গত মাসে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগ। এ সময় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নতুন করে গঠনসহ অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানোর তাগিদ দেন। দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের দলীয় সভাপতির নির্দেশনার কথাও জানান তিনি। তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন শাখার সম্মেলন, সহযোগী সংগঠনের প্রত্যেকের অসমাপ্ত সম্মেলন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় বিলম্বসহ সাংগঠনিক সমস্যার সমাধান করা জরুরি। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা সব শাখাকে ঢাকায় ডেকে বসতে পারেন। সমস্যা ও বিরোধ থাকলে তা সমাধানে অনতিবিলম্বে কাজ শুরু করতে হবে।
দলীয় সূত্রে বলছে, রমজানে বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হাতে নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। তবে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করার জন্য ঘরোয়া পরিবেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বিশেষ করে রমজানে দলীয় কোন্দল নিরসন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রমজানের পরপরই স্থানীয় সরকারের বড় আয়োজন উপজেলা নির্বাচন। মে মাসে চার ধাপে ভোটগ্রহণ হবে। প্রথম ধাপ ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপ ১১ মে, তৃতীয় ধাপ ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে এবারের ইফতার রাজনীতি গুরুত্ব পাবে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, রমজানে ঘরোয়া পরিবেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা হবে। তৃণমূলের যেসব জায়গায় কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো সমাধান করা হবে। রমজানের পর তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলন করা হবে। সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনে দৃষ্টি দেওয়া হবে।