সংবাদ সম্মেলনে তথ্য
শব্দদূষণে ঢাকার অর্ধেক মানুষের শ্রবণশক্তি কমবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকার শব্দদূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ হারে শব্দদূষণ চলতে থাকলে অদূরভবিষ্যতে রাজধানীতে বসবাসকারী অর্ধেক মানুষ ৩০ ডেসিবেল শ্রবণশক্তি হারাবেন। উচ্চ শব্দের কারণে শিশু ও গর্ভবতী নারীরা বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত ঢাকা মহানগরীতে ‘শব্দদূষণের বর্তমান চিত্র ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মো. মুস্তাক হোসেন, নগর গবেষক মো. জাহাঙ্গীর আলম, কেমেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
লিখিত বক্তৃতায় প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বলেন, রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নগর?-মহানগরে এমনকি কোনো কোনো গ্রামীণ জনপদেও শব্দদূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। শব্দদূষণের কুফল বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব এবং দূষণ প্রতিরোধে যথাযথ প্রশাসনিক নজরদারি ও পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই এমনটি হচ্ছে। তাই শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে সরকার শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ প্রণয়ন করলেও তার বাস্তব প্রয়োগ খুবই অপ্রতুল। শব্দদূষণ মানুষের স্নায়ুগুলো ধবংস করে দেয়। ক্রমাগত শব্দদূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে। তখন মানুষ আর স্বাভাবিকভাবে শুনতে পায় না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট এবং ১০০ ডেসিবল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দদূষণের বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে অদূরভবিষ্যতে ঢাকা মহানগরীর ৫০ শতাংশ মানুষ ৩০ ডেসিবল শব্দ শোনার ক্ষমতা হারাবেন। শিশুদের মধ্যে বধিরতার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে এবং তারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও বিকার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা) চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা মহানগরীর ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। এতে নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৮৪.৫ থেকে ১০১.৭ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৯৬.৪ থেকে ১০১.৫ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন ৮২.০ থেকে ৯১.০ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৮৩.০ থেকে ৯১.৬ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন ৯১.০ থেকে ১০১.৫ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৮৯.০ থেকে ১০৩.৮ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৯২.০ থেকে ৯৭.০ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৯১.০ থেকে ৯৯.০ ডেসিবল। বাসের ভেতর ৮০.৪ থেকে ৮৩.৯ ডেসিবল। বাংলামটরে শব্দের মাত্রা ১০৩.৮ ডেসিবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৮৬.০০ থেকে ৯৪.০০ ডেসিবল। সচিবালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯৬.০০ থেকে ১০১.৭ ডেসিবল রেকর্ড করা হয়।
ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে আড়াই গুণের বেশি।
আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশি। আবাসিক এলাকায় রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশি। মিশ্র এলাকায় রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন ও রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশি। নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি সচিবালয় এলাকায় যা ১০১.৭ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ধানমন্ডি ল্যাবএইড এলাকায় যা ১০১.৫ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বাংলামটরে যা ১০৩.৮ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি লালবাগ সেকশনে ১০১.৫ ডেসিবল। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ হার কামানো যেতে পারে বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।