অগ্নিঝরা মার্চ
স্বাধীন দেশের বার্তা নিয়ে উড়ল মানচিত্র খচিত পতাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অগ্নিঝরা মার্চের দ্বিতীয় দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে সামরিক শাসন জারি করা হয়। এর প্রতিবাদে তখন উত্তাল সারা দেশ। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর জুলুম ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডাকসুর নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ছাত্র সমাবেশে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসমাবেশে প্রথম বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রংয়ের বাংলার মানচিত্রখচিত পতাকা যেন স্বাধীন বাংলাদেশের বার্তা দিয়েছিল গোটা জাতিকে।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য মতে, এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব। সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফায়েল আহমদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন ও নূরে আলম সিদ্দিকী। বিশাল এ সভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়। সভার শুরুতে সমবেত ছাত্রসমাজ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করে। সভায় ছাত্রলীগ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখনও বক্তৃতা করেন। সভা শেষে এক বিরাট শোভাযাত্রা স্বাধীনতার স্লোগান দিতে দিতে বায়তুল মোকাররম গমন করে।
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ানো হয়। রাতে হঠাৎ বেতার মারফত ঢাকা শহরে কারফিউ জারির ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শ্রমিক এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকরা প্রবল স্লোগান তুলে কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল বের করেন। তাদের স্লোগান ছিল-‘সান্ধ্য আইন মানি না’, ‘জয় বাংলা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ ইত্যাদি।
সমস্ত শহরে কারফিউ ভঙ্গ করে ব্যারিকেড রচনা করা হয়। ডিআইটি অ্যাভিনিউয়ের মোড়, মর্নিং নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে ৯টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। বিরাট এক জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে গভর্নর হাউজের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও গুলি চালানো হয়। এছাড়া শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চলে।