কুসিক উপনির্বাচন
পালটাপালটি শোডাউনে নিজাম-সাক্কু, কৌশলে হাঁটছেন সূচনা
আবুল খায়ের, কুমিল্লা
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে পালটাপালটি শোডাউনে ব্যস্ত নিজাম উদ্দিন কায়সার ও মনিরুল হক সাক্কু। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এ দুই নেতার মধ্যে এখন রীতিমতো স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। কায়সার মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। আর মনিরুল হক সাক্কু সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা। দুই প্রার্থীই নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য জানান দিতে প্রতিদিনই লোকসমাগম করছেন। নিজামের সঙ্গে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে সাক্কুর সঙ্গে নগরের বাইরের লোকজন বেশি দেখা যাচ্ছে। এদিকে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতার দ্বন্দ্বের সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা। তিনি অনেকটা কৌশলে এগোচ্ছেন।
জানা যায়, কুমিল্লায় বিএনপির রাজনীতিতে মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার পরিবারের দ্বন্দ্ব ও আধিপত্যের লড়াই দীর্ঘদিনের। নেতাকর্মীদের অভিযোগ-সাক্কু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে দলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছেন। তিনি বিএনপির ভেতরে কোন্দল সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের পরোক্ষ শেলটারে একাধিকবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করেছেন। আগে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার শেলটারে মেয়র নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়েছেন। বিগত নির্বাচনে ওই নেতার আশীর্বাদ না থাকায় ঝরে পড়েছেন। এবার উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের অপর একটি অংশের সঙ্গে আঁতাত করে জয়ী হতে চাইছেন। এতে দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা সাক্কুর বিপক্ষে এবং নিজাম উদ্দিন কায়সারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
প্রচার নেমেই নিজাম-সাক্কু পালটাপালটি শোডাউন করে চলেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর রেসকোর্স এলাকায় বিশাল শোডাউন করেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। নিজামের শোডাউনের পালটা জবাব দিতে মঙ্গলবার সকালে নগরীতে শোডাউন করেন সাক্কু। পালটাপালটি শোডাউনে নিজামের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা থাকলেও সাক্কুর শোডাউনে নগরের বাইরের লোকজনকে দেখা যাচ্ছে।
নিজাম-সাক্কুর এ দ্বন্দ্বের সুযোগে কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় সংসদ-সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে সূচনা। বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির দুই প্রার্থীর দ্বন্দ্ব সূচনার জন্য আশীর্বাদ হিসাবে কাজে লাগতে পারে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘সাক্কু টোটালি আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভরশীল। তিনি যা করেছেন, আওয়ামী লীগের শেলটারেই করেছেন। বিএনপির কোনো নেতাকর্মী তার সঙ্গে নেই। তিনি বহিরাগত লোক দিয়ে শোডাউন করাচ্ছেন।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনিরুল হক সাক্কু। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক কিংবা আঁতাত নেই। বিএনপির একটি অংশ আমার সঙ্গে রয়েছে।’ এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শোডাউনের অভিযোগে মেয়রপ্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারকে শোকজ করা হয়েছে। শোডাউন করায় মনিরুল হক সাক্কুর ব্যাপারেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আচরণবিধি লঙ্ঘন : মঙ্গলবার প্রচারের পঞ্চম দিনে চার প্রার্থী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। নগরীর কালিয়াজুড়ি ছোটরা এলাকায় গণসংযোগ করেন বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা। নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। বিকালে তিনি নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। সন্ধ্যায় একাধিক উঠান বৈঠকে অংশ নেন তিনি। টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু নগরীর মোগলটুলী এলাকায় গণসংযোগ করেন। আর হাতি প্রতীকের প্রার্থী নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম টমছমব্রিজ এলাকায় গণসংযোগ করেন। প্রচারে প্রার্থীরা অনলাইন প্ল্যাটফরমও ব্যবহার করছেন। তবে প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। তাই তৎপর হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশন। সতর্ক করাসহ কারণ দর্শানোর নেটিশ দেওয়া হচ্ছে বিধি লঙ্খনকারীদের।
নিজামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ : আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার রাতে নোটিশ দেওয়া হলেও প্রকাশ্যে আসে মঙ্গলবার।
নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীকেই পর্যবেক্ষণে রেখেছে। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে এই সিটির তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত। গত বছর ডিসেম্বরে তিনি মারা যান। এ কারণে মেয়র পদে উপনির্বাচন হচ্ছে।