সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া
আইন দিয়ে বাকস্বাধীনতা সীমিত করা যাবে না
নিবর্তনমূলক আইনটি বাতিল করা দরকার
আলমগীর হোসেন
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা চরম বাধা। সাংবাদিকদের পেশাগত কাজের ধারা খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিও প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের ওই বক্তব্যের বিষয়ে দেশের আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যে কোনো নাগরিকের বাকস্বাধীনতা এ আইন দিয়ে সীমিত করা যাবে না। কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না, কথা বলা যাবে না-এমন আইন করা হলে বুঝতে হবে সেই দেশে গণতন্ত্র নেই, বাকস্বাধীনতা নেই।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, বাকস্বাধীনতা আইন ধারা সীমিত করা যাবে না। অর্থাৎ এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারবেন না, এই কথা যখনই যে দেশের আইন বলে, তখন বুঝতে হবে সেই দেশে গণতন্ত্র নেই, বাকস্বাধীনতা নেই।
তিনি বলেন, যখনই আইন করে বলা হয় যে, আপনি এ ব্যাপারে বললে অপরাধ হবে, শাস্তি হবে, সেই দেশে গণতন্ত্র থাকে না, বাকস্বাধীনতাও থাকে না। যেসব দেশে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা আছে-সেসব দেশের আইনে এসব কথা লেখা থাকে না। সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির মন্তব্যকে যথার্থ বলেও মনে করেন শাহদীন মালিক।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, বিচারপতি যেভাবে বলেছেন- সেটা তো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বিচারকরা যখন তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছেন এসব আইন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে, তাহলে সেটা তো আমলে নিতেই হবে। তিনি বলেন, ‘উনারা (বিচারকরা) কীভাবে আইনটাকে দেখছেন, আমরা তো ভুক্তভোগীর জায়গা থেকে কথা বলি। আমরা আইনটি নিয়ে যে আলোচনা করে আসছি হয়তো উনার (বিচারপতি) সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত হতে পারে, তবে মেসেজটা কিন্তু একই।’ একজন কর্মরত বিচারপতি আইনের ধারা প্রয়োগের সমস্যার কথাগুলো বলেছেন, আমি মনে করি এটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারার পরিবর্তন প্রসঙ্গে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, এটা অলংকারিক পরিবর্তন, গুরুতর কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আইনটি নিয়ে জনগণের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি, এটা বাতিল করা উচিত।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির বক্তব্যকে প্রতিধ্বনি হিসাবে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না। তিনি যুগান্তরকে বলেন, তিনি একজন কর্মরত বিচারপতি। এই কথা বলায় উনার প্রতি জনগণের একটা শ্রদ্ধা থাকবে। বিচারকদের প্রতি একটা আস্থাশীল জায়গা সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, অবশ্যই এই নিবর্তনমূলক আইনটি বাতিল করা দরকার।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপক অপপ্রয়োগ নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনা শুরু হলে সরকার গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওই আইনটি রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করে। এ আইনে বাকস্বাধীনতার বেশ কয়েকটি ধারা এখনো নিবর্তনমূলক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে রয়েছে-২১ ও ২৮ ধারা।
যেগুলো সংশোধনের কথা বলা হয়েছিল, সেগুলো হচ্ছে ৮, ২৫, ২৭, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৮ সালে নির্বাচনের মুখে সরকার যখন এ আইনে পাশের উদ্যোগ নেয়, তখন এসব ধারা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা ও প্রতিবাদ হয়েছিল। সম্পাদক পরিষদ ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে বিবৃতিও দিয়েছিল, তাতে আইনটির ৯টি ধারার (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) মৌলিক কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করেছিল।