কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচন
মাঠে প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা
তাবারক উল্লাহ কায়েস, কুমিল্লা
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন বর্জন করে আসছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। কিন্তু কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রকাশ্যে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছেন মহানগর, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন। নির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে দুজন আওয়ামী লীগ নেতা, আর দুজন বিএনপি ঘরানার। বিএনপি ঘরানার দুই নেতা হলেন-সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য সাবেক আহবায়ক নিজাম উদ্দিন কায়সার। কায়সার বিএনপির নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এবং বিএনপির কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক হাজী আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় না থাকায় কুমিল্লার নেতাকর্মীরা একরকম জিম্মি দশায় ছিলেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী মাঠে নামেননি। দীর্ঘদিন বঞ্চনার পর তারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। এটি তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার নির্বাচন। তাই নিরুপায় হয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। নেতাকর্মীদের একটি অংশ বলছেন, এই নির্বাচন দলের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। অনেকে বলছেন, হাজী ইয়াছিন ও নিজাম উদ্দিন কায়সারকে ভালোবেসে এই নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি। গত সিটি নির্বাচনে এই তরুণ প্রার্থী বিএনপির তেমন সমর্থন না পেলেও প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়েছেন। এ কারণে সাক্কুর ভোটেও ভাটা পড়েছে।
নির্বাচনে পরাজয়ের পর সাবেক মেয়র মনিরুল সাক্কু কায়সারকে কারণ হিসেবে সরাসরি ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, তার নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ কায়সার।
কুমিল্লার সুধীমহল বলছেন, এ বছর বিএনপি নেতাকর্মী শেষ পর্যন্ত যার পক্ষে থাকবে তার পক্ষেই যাবে নির্বাচনের ফল। তাই বিএনপি নির্বাচনে না এলেও ভোটের ফলাফলে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে দলটির নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীদের একটা অংশ আছেন, সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে। তিনি টানা সিটি মেয়র থাকলেও দলের কর্মসূচিতে ছিলেন না। জেল-জুলুম মামলায় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন না।
তাই নেতাকর্মীরা ভিড়ছেন তরুণ নেতা কায়সারের দিকে। নেতাকর্মীরা বলছেন, এই নির্বাচন কোনো স্বাভাবিক নির্বাচন নয়। এটি কুমিল্লা বিএনপি শক্তির পরীক্ষা।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে কায়সারের প্রচারণার বহরে দেখা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীকে। এর বেশির ভাগই হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনের অনুসারী।
কায়সারের প্রচারণায় দেখা গেছে, হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনের ছোট ছেলে ইফতেখার রশিদ অপুকে, সদর দক্ষিণ পূর্ব বিএনপির সাবেক সভাপতি এসএ বারি সেলিমকে, মহানগর বিএনপির যুগ্ম হওয়ার কাতর রহমান ছুটি, শহীদুল্লাহ রতন, সাবেক কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন, ভিপি মো. দুলাল, আব্দুল জলিল, আব্দুর রহমান, সদস্য জামাল হোসেন, রিয়াজ খান রাজু, জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম, সদস্য শফিউল আলম রায়হান, মহানগর কৃষক দলের সদস্য ইকরাম হোসেন তাজ, ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য সচিব আমির হোসেনকে।
অপরপক্ষে সাক্কুর পক্ষে বিএনপির বর্তমান কমিটির তেমন কাউকে দেখা যায়নি। সাবেকদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক নেতা আনোয়ার হোসেন, আবুল হোসেন ও মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা নুরে আলম প্রমুখ।
নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমাকে দল বহিষ্কার করেছে। দলের সাথে আমার নির্বাচনের কোনো যোগসূত্র নেই। কুমিল্লার মানুষ জিম্মি। এখানে দলের কোনো প্রশ্ন নেই। এবারের নির্বাচন কুমিল্লার মানুষের জিম্মি দশা থেকে মুক্তির নির্বাচন। তাই দলমত নির্বিশেষে মাঠে নেমে পড়েছেন। এর আগের নির্বাচনে অনেকে গোপনে সমর্থন দিয়েছেন।
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। মানুষ আমাকে চায় তাই নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচন করছি। বিএনপির নেতাকর্মীদের সমর্থন আছে। তবে নেতাকর্মীদের একটি অংশ নেই এটা সত্য।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না। যারা যাচ্ছে তারা বহিষ্কৃত। আর যারা তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করছে সবাই ব্যক্তিগতভাবে করছে। এর সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই।