বই মেলা ২০২৪
একুশের দিনে শুধু মানুষ আর মানুষ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার বইমেলা শুরু হয় সকাল ৮টায়। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন শহিদ মিনারে যারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই দিনের নানা সময়ে মেলায় এসেছেন। বেলা একটু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় নামে মানুষের ঢল। সন্ধ্যা নামার আগেই তা জনারণ্যে পরিণত হয়। একসময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভরে যায় কানায় কানায়।
অনেকে পরিবার নিয়ে সারা দিন কাটিয়েছেন মেলা প্রাঙ্গণেই। অনেকে এসেছিলেন বন্ধুদের নিয়ে। এদিন মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোয় বিক্রয়কর্মীদের দম নেওয়ার মতো ফুরসতও ছিল না। ছোট-বড় সব প্রকাশনীতে ছিল পাঠকের ভিড়। হাতে হাতে ছিল নতুন কেনা বই। তবে মানুষের সমাগমের তুলনায় বিক্রি কম। এদিনের বিকিকিনিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। হাতে হাতে বই আর ব্যাগভর্তি বইয়ের সমারোহে এদিনের মেলায় প্রতিধ্বনিত ছিল সফলতার সুর। এদিন প্রায় সব ধরনের স্টলেই ছিল আশানুরূপ বিক্রি।
বিভিন্ন স্টলে নিজেদের ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন দেশের নামকরা লেখকরাও। অনন্যা প্রকাশনীতে ইমদাদুল হক মিলন, প্রথমায় আনিসুল হক, অনিন্দ্য প্রকাশে কলকাতার কবি রুদ্র গোস্বামী ছিলেন।
কথাপ্রকাশের ব্যবস্থাপক মো. ইউনুছ বলেন, আজ অনেক পাঠক-দর্শনার্থী এসেছেন। কেউ বই কিনছেন, কেউ ঘুরে দেখছেন। তবে খুশির খবর হলো-আজ ভাষা আন্দোলনের বইয়ের প্রতি মানুষের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে বলে দেখেছি।
ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ভাষাশহিদদের স্মরণে আয়োজিক এ মেলায় মানুষ ঢু মারছে। পাঠকের উপস্থিতির তুলনায় বিক্রিও ভালো।
বুধবারের নতুন বই : বুধবার নতুন বই এসেছে ২৩৪টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে সৌম্য প্রকাশনী এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি’। র্যামন পাবলিশার্স এনেছে আনিসুল হকের গল্পগ্রন্থ ‘অমাবস্যার রাতে কে এসেছিল’। কথাপ্রকাশ এনেছে মোহাম্মদ হাননানের গবেষণা ‘বাঙালি মুসলমানের প্রত্যুষকাল’। পাঠক সমাবেশ এনেছে সাহাদাত পারভেজের জীবনী ‘বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী: একজন সাইদা খানম’। আদিগন্ত প্রকাশন এনেছে সুজন বড়ুয়ার উপন্যাস ‘ভোরের সূর্যমুখী’। অন্যপ্রকাশ এনেছে ফরিদুর রেজা সাগরের গল্প ‘তারপরও হাফডজন ছোটোকাকু’ এবং স্বকৃত নোমানের প্রবন্ধ ‘যুবতী রাধে, সৈয়দ হক ও আরও কথা’। ঐতিহ্য এনেছে আসাদুজ্জামান নূরের আত্মজীবনী ‘নিরালা নীলে’। খুশবু প্রকাশন এনেছে লুৎফর রহমান রিটনের ছড়া ‘বেড়াল ছানা ফোন করেছে কুকুর ছানার মাকে’।
মেলা মঞ্চের আয়োজন : সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। স্বরচিত কবিতা পাঠে প্রায় ১৩৫ জন কবি কবিতা পাঠ করেন। সভাপতিত্ব করেন কবি শামীম আজাদ। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪। স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। অমর একুশে বক্তৃতা করেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর।
বইমেলার মূল মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, আমিনুর রহমান সুলতান, হাসানাত লোকমান, বদরুল হায়দার, ফারহানা রহমান, সঞ্জীব পুরোহিত, নূর-এ-জান্নাত, শিমুল পারভীন এবং আরেফিন রব। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, রূপা চক্রবর্তী এবং আহ্কামউল্লাহ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, কল্যাণী ঘোষ, শিবু রায়, মহাদেব ঘোষ, মিথুন জব্বার, বাবু জব্বার, আব্দুল হালিম খান, স্বর্ণময়ী মন্ডল ও জান্নাত-এ-ফেরদৌসী।
লেখক বলছি মঞ্চ : লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, শিশুসাহিত্যিক ওয়াসিফ এ খোদা, কথাসাহিত্যিক মাসউদ আহমাদ এবং শিশুসাহিত্যিক ইমরান পরশ।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : এই মঞ্চে বিকাল ৫টায় ‘প্রথম কবিতার বই: অনুভূতির দলিল’ এই প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন আশনা হাবিব ভাবনা, স্নিগ্ধা বাউল, সঞ্জয় ঘোষ, রিপন আহসান রিতু, মীর রবি, মাশরুরা লাকী ও মিনহাজুল হক। গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন কবি ফারহান ইশরাক ও কথাসাহিত্যিক খালিদ মারুফ।