Logo
Logo
×

শেষ পাতা

উৎকণ্ঠায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক

ছাত্রলীগে বারবার সংঘর্ষ চবি প্রশাসনের ব্যর্থতায়

উপাচার্যকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ শিক্ষামন্ত্রীর

Icon

রোকনুজ্জামান, চবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ছাত্রলীগে বারবার সংঘর্ষ চবি প্রশাসনের ব্যর্থতায়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলোর সংঘর্ষ নতুন নয়। নিজেদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও অন্তঃকলহের কারণে নিয়মিতই নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

বৃহস্পতি ও শুক্রবার তিন গ্রুপের দফায়-দফায় সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সংঘর্ষ না হলেও দিনভর ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল উত্তেজনা।

সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্যাম্পাসের এমন অরাজক পরিস্থিতিতে রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ভিসি ড. শিরীন আখতারকে অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপগুলোর লাগাম টানার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ব্যর্থতা যেমন রয়েছে, তেমনি ক্ষেত্রবিশেষে কোনো এক পক্ষকে উসকানি বা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার কারণেও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সংঘাত-সংঘর্ষ থামছে না। আওয়ামী লীগ নেতারাও ক্যাম্পাসে সংঘাত থামাতে উদ্যোগ নিচ্ছেন না।

গত এক বছরে অন্তত ১৫ বার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে উপপক্ষগুলো। চাঁদাবাজি, হলের কক্ষ দখল, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মারধরের মতো অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে বিবদমান গ্রুপগুলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তায়। টেন্ডার নিয়েও চলে মারামারি বা খুনোখুনির মতো ঘটনা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে নিজেদের প্রয়োজনে ছাত্রলীগ কর্মীদের ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ কারণে প্রশাসনও অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

সর্বশেষ সংঘর্ষের কিছু ঘটনা পর্যেবক্ষণ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনা শুরুর পর থেকেই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রায় ২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তাদের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সামনেই দুপক্ষের নেতাকর্মীরা ধাওয়া-পালটাধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও রামদা নিয়ে মহড়া দেয়। কর্মীদের হলে ঢুকিয়ে দিতে গেলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের গালাগাল করতেও দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে কয়েকজন সহকারী প্রক্টরকে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা এ বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। এক সহকারী প্রক্টর বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা হলে প্রবেশের চেষ্টা করেছি। তবে ছাত্রদের বাধার মুখে প্রবেশ করতে পারিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। অন্যটি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসাবে পরিচিত। তাদের আশীর্বাদ নিয়েই দুপক্ষ চবি ক্যাম্পাসে দাপট দেখায়।

ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ে চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) উপগ্রুপের নেতা মির্জা খবির সাদাফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুরুতেই শক্ত পদক্ষেপ না নেওয়ায় ঘটনা বড় হয়েছে। সিক্সটি নাইনের আকিব জাভেদ আমাদের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে। ৪ ঘণ্টা অপারেশন করে তাকে প্রায় ৪০টি সেলাই দিতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন সিক্সটি নাইন উপগ্রুপের নেতারাও।

চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. নূরুল আজিম সিকদার যুগান্তরকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি। তবে ছাত্ররা যদি সহনশীল মনোভাব না রাখে, তাহলে আমাদের জন্য মুশকিল হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়িতে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকে না। তখন আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। ততক্ষণে সংঘাত ছড়িয়ে যায়।’

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জয়নুল আবেদীন যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত ফোর্স আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তাদের নির্দশনা না পেলে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।’

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ শিক্ষামন্ত্রীর : এদিকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী চবি উপাচার্য ড. শিরীন আখতারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি সংঘাত ও সংঘর্ষের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যকে অনুরোধ করেছেন।

শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পোস্টে আরও বলা হয়, এর আগে যারা এ ধরনের ঘটনায় জড়িত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকাডেমিক ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিও অনুরোধ জানান তিনি।

ব্যবসায়ীদের ক্ষতি : আর্থিক ক্ষতি ও আতঙ্কের মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ব্যবসায়ীরা। টানা দুদিনের সংঘর্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে খাবার হোটেল, মুদি দোকানসহ অন্যান্য দোকান। ফলে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা দোকান খুলতেও ভয় পাচ্ছেন।

সূত্রমতে, প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন দোকান মালিকরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেসগুলোরও ক্ষতি হয়েছে। আশপাশের বাসা-বাড়ির দরজা-জানালা ও টিনে ইট-পাথরের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম