ফের তীব্র গ্যাস সংকট
কালিয়াকৈরে উৎপাদন ব্যাহত কারখানা বন্ধের উপক্রম
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন কারখানায় আবারও গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের অভাবে বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং তা প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। চলমান সংকটে কারখানার জেনারেটর ব্রয়লার ডাইং সেকশনসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কোম্পানিকে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন কারখানা সূত্রে জানা গেছে, শিল্প অধ্যুষিত কালিয়াকৈর বিভিন্ন এলাকায় ৩ শতাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। গত কয়েক মাস ধরে এসব শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট দেখা দেওয়ায় উৎপাদন কমে তা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের আনসার একাডেমির ৩নং গেইট এলাকার গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানায় ও উপজেলার সফিপুর এলাকার মাহমুদ ডেনিম কারখানায় দশদিন ধরে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেডে গ্যাস সংকটে ফ্যাব্রিকস ডাইং করাতে না পারায় প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারখানার কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় পণ্য রপ্তানিও অর্ধেকে নেমে এসেছে। ওই কারখানায় প্রায় ১৪শ শ্রমিক কাজ করছেন। সারা দিন এক পিএস গ্যাসও লাইনে থাকে না। রাতে সামান্য গ্যাস এলেও তা কোনো কাজে লাগছে না। সিএনজি গ্যাস দিয়ে কোনো রকম ধুকে ধুকে চলছে কারখানা। গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে উপজেলার সফিপুরের মাহমুদ ডেনিম কারখানারও একই চিত্র। গ্যাস সংকট থাকায় কারখানার ডাইং সেকশন প্রায় বন্ধের পথে। দিনে বেলায় গ্যাসের চাপ না থাকায় ডাইং সেকশনের শ্রমিকদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই বসে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার আরও বেশ কয়েকটি কারখানায় এ গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে এমন সমস্যা বিরাজ করলেও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষও হতাশায় ভুগছে। তাদের দাবি এভাবে আর কিছুদিন চললে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।
গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার সিও জাহিদুর রহমান আনিস বলেন, গত কয়েক মাস ধরে গ্যাস সংকট চলছে। ১০ দিন ধরে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্যাস সংকটে ফ্যাব্রিকস ডাইং করাতে না পারায় প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ব্রয়লার মেশিন চলে না, ডাইং মেশিন চালু দিলে গ্যাসের কারণে কাপড়ের রং বদলে যায়। শিপমেন্ট সময়মতো দেওয়া যাচ্ছে না। গ্যাস বিল আগের তুলনায় অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। উৎপাদন সাংঘাতিকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
মাহমুদ ডেনিমস কারখানার ম্যানেজার এইচআর এডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স মো. আবু তালেব জানান, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংকট চলছে। গ্যাসের প্রেশার নেই। কারখানা ৪ ভাগের একভাগও চলে না। গত ১০/১২ দিন থেকে সমস্যা তীব্র হয়েছে। আগে রাতে কিছু গ্যাস পাওয়া যেত বর্তমানে রাত-দিন সমান। গ্যাসের কারণে জেনারেটর রান করতে পারছি না। ব্রয়লারও চলে না। কারখানায় প্রায় ২৭শ শ্রমিক রয়েছে। গ্যাসের জন্য কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
কোনাবাড়ী এলাকার জনইনটেনজাইন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলন হোসেন বলেন, গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানায় মাল ডাইং করার জন্য দেওয়া হয়েছে। গ্যাসের কারণে মাল ডাইং করতে পারছে না। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কালিয়াকৈর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ বিন ইউসুফ বলেন, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম। কবে ঠিক হবে বলতে পারছি না। চেষ্টা চলছে ওই অবস্থা থাকবে না। আশা করি সংকট কেটে যাবে।