শুল্ক ছাড় ও কঠোর হুঁশিয়ারির প্রভাব নেই
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে চড়া ভোগ্যপণ্যের দাম
চিনি, চাল, ছোলা ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শুল্ক ছাড় ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির পরও দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। উলটো চিনি, চাল ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। অথচ চিনির দাম কমাতে তিন মাসের ব্যবধানে দুদফায় কমানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। কয়েকদিনের ব্যবধানে পণ্যটির মনপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চিনির বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। সবজির দাম কিছুটা কমলেও মাংস আগের মতোই রয়েছে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার ভোগ্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু দাম কমছে না। অথচ কোনো পণ্যে শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীরা মিনিটের মধ্যেই বাড়তি দাম কার্যকর করেন। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজেকলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কি না, তা যাচাই-বাছাই বা নজরদারি কিছুই নেই। এতে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, রমজান উপলক্ষ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক-কর ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বলা হয়, পরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত পাম তেল ও পরিশোধিত পাম তেলে আমদানি পর্যায়ে আরোপিত মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিনে ৫ টাকা ৬৭ পয়সা করভার কমবে। পাম তেলে কেজিতে করভার কমবে ৪ টাকা ৬৬ পয়সা। সিদ্ধ ও আতপ চালের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। একইভাবে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগে চাল আমদানিতে কেজিতে করভার ছিল ৩১ টাকা। এখন তা কেজিতে সাড়ে ২৩ টাকা কমানো হয়।
এতসব উদ্যোগ নেওয়ার পরও ভোগ্যপণ্যের বাজারে দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। কয়েকদিন আগেও প্রতি মন (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনির পাইকারি দাম ছিল ৪ হাজার ৮৭০ টাকা। শুল্ক কমানোর ঘোষণা আসার পর দাম আরও বেড়েছে। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে মনপ্রতি ৪ হাজার ৯২০ টাকায়। কেজিতে দাম বেড়েছে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। শুল্ক কমানোর ফলে কেজিপ্রতি প্রায় ১ টাকার বেশি কমার সম্ভাবনা থাকলেও তা বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না; বরং ১ টাকার বেশি বেড়েছে।
চালের মানভেদে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। জিরাসাইল চাল ৫০ কেজির বস্তা আগে ছিল ২৯০০-৩০০০ টাকা, বেড়ে হয়েছে ৩১০০ টাকা। পাইজাম প্রতি বস্তা আগে ছিল ২৪২৫, বেড়ে হয়েছে ২৬০০ টাকা। নুরজাহান প্রতি বস্তা আগে ছিল ২২০০, এখন বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়। ভোজ্যতেল লিটারে প্রায় দুই টাকা বেড়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭০ ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। ছোলার পাশাপাশি বাড়ছে অন্যান্য ডালের দামও। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ থেকে ১১০, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০, ডাবলির ডাল ৭৫, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০, চিকন মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০, মোটা দানার মুগডাল ১৪৫ থেকে ১৫০, চিকন মুগডাল ১৭০ থেকে ১৮০ এবং খেসারি ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০ থেকে ৫৫, প্যাকেটজাত আটা ৬৫ থেকে ৬৮, খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ এবং প্যাকেটজাত ময়দা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি দাবাস খেজুর ৪৫০ থেকে ৪৮০, জিহাদি খেজুর ২৪০, আজওয়া খেজুর ৯০০, বরই খেজুর ৪০০, মরিয়ম খেজুর ৯০০ এবং মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। এক মাসে দাম কমেছে শুধু জিরার। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি লবঙ্গ ১ হাজার ৮০০, গোলমরিচ ৮০০, এলাচ ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ এবং দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে চিনির দাম বাড়ছে। এতে শুল্ক প্রত্যাহারের পরও দামে কোনো প্রভাব পড়ছে না।
তবে চট্টগ্রামে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুলা ৩০ থেকে ৩৫, শালগম ৪০, করলা ৬০ থেকে ৮০, শসা ৬০, লতি ৮০, শিম ৫০ থেকে ৬০, বরবটি ৮০, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ এবং গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন জাতভেদে ৬০ থেকে ১০০, খিরা ৫০, টম্যাটো ৬০ থেকে ৭০, কহি ৮০, কাঁচা টম্যাটো ৩০ থেকে ৪০ এবং পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০, সোনালি মুরগি ৩২০, দেশি মুরগি ৫৮০ থেকে ৬০০, সাদা লেয়ার ২৫০ এবং লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।