বই মেলা ২০২৪
পাঠকের নজর মননশীল বইয়ে
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত দশ বছরে দেশের পাঠক সমাজে বিরাট একটি পরিবর্তন এসেছে। গল্প, উপন্যাস, কবিতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গবেষণা, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, দর্শন, সংগীত, বিজ্ঞান, ধর্মবিষয়ক বইয়ের পাঠক। দেশের ছোট-বড় সবগুলো প্রকাশনা এখন এ ধারার বই সারা বছর প্রকাশ করে। অনেকগুলো প্রকাশনা সংস্থা মূলত এই ধরনের বইকেই তাদের মূল ধারা হিসেবে বেছে নিয়েছে। তৈরি হয়েছে আলাদা এবং বিশাল পাঠককুল। বইমেলারও একটি বড় অংশ তারা।
কথাপ্রকাশ এমন একটি প্রকাশনা যারা মূলত গবেষণা, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাসনির্ভর বই প্রকাশ করে। এ বছর প্রকাশনাটি থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সাতচল্লিশের দেশভাগে গান্ধী ও জিন্নাহ’, যতীন সরকারের ‘সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা’, সনৎকুমার সাহার ‘অর্থনীতির ন্যায় অন্যায়’, জাহীদ রেজা নূরের ‘৬ দফা থেকে স্বাধীকার’সহ উল্লেখযোগ্য সব বই প্রকাশ হয়েছে। কথাপ্রকাশের ব্যবস্থাপক মো. ইউনূস আলী যুগান্তরকে বলেন, পাঠকরা আমাদের প্রকাশনাকে চেনেন গবেষণা, প্রবন্ধ, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাসবিষয়ক বইয়ের জন্য। অনেক পাঠক এসে বলেন, বাংলা একাডেমিতে এখন এ ধারার খুব ভালো বই পাই না। এ বইগুলোর আলাদা পাঠককুল আছে। বইগুলোর বিক্রি ভালো বলেই আমরা এখন এই ধারার নানা বিষয়কে উপজীব্য করে উপন্যাস প্রকাশ করছি। লেলিন উপন্যাসটি তেমনই। ছয় বছরের চেষ্টায় উপন্যাসটি লেখা হয়েছে।
প্রথমার বইয়ের একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে প্রবন্ধ, গবেষণা, ইতিহাস। আনু মুহাম্মদের লেখা ‘অর্থশাস্ত্র : ইতিহাস, দর্শন রাষ্ট্রনীতি’, বদিউল আলম মজুমদারের ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রাজনীতি’, মহিউদ্দিন আহমদের ‘প্লাবনভূমির মহাকাব্য’, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী’সহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ করেছে তারা।
এ বইগুলোর বাজারের বিষয়ে প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গবেষণা, প্রবন্ধ, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, আত্মজীবনী, অনুবাদ, ধর্মীয়, গণিত, বিজ্ঞানের বইগুলোর বিশাল পাঠককুল। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এ বইগুলো শুধু মেলায় নয়-সারা বছরই বিক্রি হয়।
পাঠক সমাবেশ থেকে এবারের বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে স্বকৃত নোমানের ‘বাংলার ইসলাম : সহজিয়া ও রক্ষণশীল ধারা’। মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশ করেছে কাবেদুল ইসলামের ‘গণপরিষদ বিতর্কের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান জন্মকথা’, আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের ‘শেখ মুজিব : বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু’, সময় প্রকাশন থেকে এসেছে ‘কী চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু’, ঐতিহ্য থেকে প্রকাশ হয়েছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সাহিত্যের নায়িকাদের তিন অধ্যায়’, মহিউদ্দিন আহমেদের ‘তেহাত্তরের নির্বাচন’ এবং ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ’, অবসর থেকে প্রকাশ অপেক্ষায় আছে গোলাম মুরশিদের ‘মাইকেলের দু শো বছর’। ইউপিএল থেকে প্রকাশ হয়েছে এম ইদ্রিস আলীর ‘বঞ্চনা ও প্রান্তিকতার ইতিবৃত্ত : ইসরায়েলের আরব জনগোষ্ঠী’।
রোববার বইমেলার ১১তম দিনে অনেক পাঠক ক্রেতা এসেছিলেন। অনেকেই বই কিনেছেন। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে টয়লেটের বাজে অবস্থার বিষয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকে। এদিন নতুন বই এসেছে ৯২টি। বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : কলিম শরাফী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরওয়ার মুর্শেদ। আলোচনায় অংশ নেন মাহমুদ সেলিম এবং গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রূপা চক্রবর্তী।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সরকার মাসুদ, কথাসাহিত্যিক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন এবং নাট্যগবেষক মাহফুজা হিলালী।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুথি পাঠ করেন লাল মাহমুদ। এছাড়া সিদ্দিকুর রহমান পারভেজের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’ দলগত আবৃত্তি পরিবেশন করে। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আলম দেওয়ান, আজগর আলীম, পাগলা বাবলু, আজমল শাহ, শিলা দেবী এবং ফারজানা আফরিন ইভা।