Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বই মেলা ২০২৪

জনারণ্যে বিক্রির ধুম

Icon

হক ফারুক আহমেদ

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জনারণ্যে বিক্রির ধুম

ছুটির দিন শুক্রবার বইমেলা ফিরেছে তার চিরচেনা চেহারায়। জনতার স্রোতে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলেছে বইয়ের বিকিকিনি। নতুন বই সংগ্রহ, লেখকের আনাগোনা, গণমাধ্যমের ব্যস্ততা-সব মিলিয়ে সত্যিকার অর্থেই বইয়ের উৎসবে পরিণত হয়েছে মেলা।

এদিন মেলার দ্বার খোলে বেলা ১১টায়। বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশুরাও এসেছিল শিশুপ্রহরে। এসেছিল অন্য পাঠকরাও। মেলায় সকাল থেকেই প্রচুর পাঠকের আনাগোনা শুরু হয়। বিকালের পর বইমেলা জনারণ্যে পরিণত হয়।

প্রকাশকরা বলেন, শুক্র এবং শনিবার দুই ধরনের মানুষ আসেন মূলত। যারা বইয়ের পাঠক কিন্তু শুক্র বা শনিবার ছাড়া বইমেলায় আসার সময় পান না। আরেক ধরনের পাঠক যারা মেলায় ঘুরতে আসেন মূলত, কিন্তু পছন্দ হলে বইও কেনেন। তাই এদিনগুলোতে অনেক মানুষের সমাগম হয়। তবে সমাগমের তুলনায় বই আরও বেশি বিক্রি হওয়া উচিত। অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শুক্র ও শনিবারের জনসমাগম আমাদের কাঙ্ক্ষিত। বই কেনা বা সংগ্রহ করাটাই একটা ইতিবাচক বিষয়। এদিনগুলোতে সেটি ঘটে থাকে। অনেককে দেখি এক ধরনের বাজেট নিয়ে মেলায় আসেন। কিন্তু সব বাজেট ভুলে গিয়ে বই কিনতেই থাকেন। দেখে ভীষণ ভালো লাগে।

শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসাবে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ক-শাখায় ৩৯৫, খ-শাখায় ২৩৫ এবং গ-শাখায় ৬৫ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন অধ্যাপক নিসার হোসেন।

শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক-শাখায় ১২৩, খ-শাখায় ১৩৮ এবং গ-শাখায় ৫১ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন বাচিকশিল্পী আনজুমান আরা, মো. গোলাম সারোয়ার এবং রফিকুল ইসলাম।

বিকালে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : মেলার মূল মঞ্চে বিকালে এস. ওয়াজেদ আলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইকতিয়ার চৌধুরী এবং কুদরত-ই-হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, এস. ওয়াজেদ আলি ছিলেন সব্যসাচী লেখক এবং একজন মহান চিন্তক। আন্তঃসাংস্কৃতিক মিলনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। তার আদর্শ ও চিন্তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য আমাদের যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। শুক্রবার ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শিশুসাহিত্যিক রিফাত নিগার শাপলা, গবেষক অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান, কবি মাশরুরা লাকী এবং কথাসাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন বাদল।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি হারিসুল হক, বায়তুল্লাহ কাদেরী এবং আফরোজা সোমা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আজহারুল হক আজাদ, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সুকান্ত গুপ্ত এবং তামান্না সারোয়ার নীপা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুঁথি পাঠ করেন আবুল বাশার তালুকদার। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী অণিমা মুক্তি গোমেজ, মমতা দাসী, শামসেল হক চিশতি, রওশন আলম, বাউল সুভাষ বিশ্বাস, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ওয়াদুদুর রহমান রাহুল এবং ফারুক নূরী।

নতুন বই : শুক্রবার বইমেলায় নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১৭১টি। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বসাহিত্য ভবন থেকে ডা. মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের ‘রক্তস্নাত ব্রাহ্মপুত্র’, অ্যাডর্ন থেকে সিরাজ উদ্দীন সাথীর ‘পবিত্র নগরীর লড়াই : রক্তেভেজা জেরুজালেম’, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে বেলাল চৌধুরী সম্পাদিত দুর্ভিক্ষের গল্প সংকলন ‘লঙ্গরখানা’, আগামী থেকে ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের লেখা বই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : অ্যা প্রোফাইল ইন লিডারশিপ’।

বিজিবির ব্যান্ড পার্টি : মেলার এই চিত্র পালটে যায় বিকালে। মেলার বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশে বিজিবির ব্যান্ড পার্টি এক অন্যরকম আয়োজন সাজিয়ে বসে। দলের ৩০ জন সদস্য এ সময় দেশাত্মবোধক নানা গানের সুর পরিবেশন করেন।

তাদের ঘিরে সেখানে উৎসুক মানুষের বিরাট জটলা। মেলায় প্রবেশের পর দেখা যায়, দলে দলে মানুষ আসছেন। সন্ধ্যা ঘনাতেই মেলায় জনস্রোত লক্ষ করা যায়। বইয়ের বেচাকেনাও বাড়তে শুরু করে। পুরোপুরি জমে যায় মেলা। এদিন পাঠকরা অনেকেই তাদের প্রিয় লেখকদের খুঁজেছেন। তরুণ ও নবীন লেখকদের দেখা পেলেও জনপ্রিয় অনেক লেখককেই পাননি পাঠকরা। মেলায় এদিন সবার পোশাকে ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আবহ। লাল-সবুজে সেজে এসেছিলেন অনেকেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম