Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচন

মেয়র পদে আ.লীগ প্রার্থীর নাম ঘোষণায় তোলপাড়

দলের নির্দেশনা উপেক্ষা জেলা আ.লীগ সভাপতির

Icon

আকতার ফারুক শাহিন ও মোস্তাফিজুর রহমান, পটুয়াখালী

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মেয়র পদে আ.লীগ প্রার্থীর নাম ঘোষণায় তোলপাড়

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী থাকবে না-কেন্দ্রের এমন নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করে মেয়র পদে দলীয় সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর। রোববার রাতে জেলা আ.লীগ কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয় শহরে। ভিডিওতে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে উল্লেখ করে বিশেষ একজনকে দলীয় সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিতে দেখা যায় তাকে। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী একাধিক মেয়র প্রার্থী। দলীয় সমর্থনের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেন। মোটা অঙ্কের লেনদেনের বিনিময়ে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আলমগীর বলেন, ‘পটুয়াখালী পৌরবাসীর জন্য যেটা ভালো হবে সেটাই করার চেষ্টা করছি। যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তার সবই মিথ্যা। অনৈতিক সুবিধা নিতে ব্যর্থরাই এসব বলছে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শনিবার রাতে শহরের থানা পাড়া সড়কের আ.লীগ কার্যালয়ে লোকজন নিয়ে কথা বলছেন আলমগীর। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় একজনকে সমর্থন দিতে। সেই আলোকে আজ জেলা আ.লীগের জরুরি সভা ডেকেছি। সভায় ৩ জন প্রার্থীর নাম এসেছে। একজন এনায়েতুর রহমান (এনায়েত হোসেন) পৌর আ.লীগের সহসভাপতি, আরেকজন রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, জেলা আ.লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং অন্যজন ডা. শফিকুল ইসলাম, সাবেক মেয়র ও জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। শিল্প-বাণিজ্য সম্পাদক রিয়াজ নির্বাচন করবেন না। ফলে প্রার্থী থাকেন দুজন-এনায়েতুর রহমান ও ডা. শফিকুল ইসলাম। জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করে দেখলাম, আ.লীগ যদি ডা. শফিকুল ইসলামকে সমর্থন দেয় তাহলে আমরা বিজয়ের আশা করতে পারি। এ বিষয়ে জেলা আ.লীগের সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সাবেক মেয়র ডা. শফিকুল ইসলামকে জেলা আ.লীগের পক্ষ থেকে সমর্থন দিয়েছি।’ এই বক্তব্য দেয়ার সময় তার পাশেই ছিলেন মেয়র প্রার্থী ডা. শফিকুল ইসলাম। তবে এনায়েত হোসেন সেখানে ছিলেন না।

এ ঘোষণার ভিডিও ছড়িয়ে পড়াতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে পটুয়াখালীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে। তারা প্রশ্ন রেখে বলছেন, যেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরাসরি বলেছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী থাকবে না সেখানে কিভাবে এই সমর্থন দেয়া হলো?

জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সভায় অনির্ধারিতভাবে পৌর নির্বাচনের আলোচনা ওঠে। আমিও ছিলাম। দলীয় সমর্থন বিষয়ে সর্বসম্মত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সভাপতির ক্ষমতাবলে তিনি একক সিদ্ধান্তে এই ঘোষণা দেন।

পটুয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক যুবলীগ নেতা হাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় সমর্থন না দেয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে দল থেকে। উনি কী করে এমন ঘোষণা দিলেন সেটা বুঝতে পারছি না। শুনছি মোটা অঙ্কের লেনদেন হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাবেক এমপি অ্যাড. আফজাল হোসেন বলেন, ‘দলীয়ভাবে আমরা কাউকে প্রতীক দিচ্ছি না। এখন পর্যন্ত এর বাইরে নতুন কোনো নির্দেশনা পাইনি।’

ভোটের মাঠে থাকা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি কেএম এনায়েত হোসেন বলেন, দল বলেছে প্রতীক থাকবে না। দলীয় সমর্থনও থাকবে না। সে অনুযায়ী সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমি নিজেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রচারণার মাঠে আছি। জেলা সভাপতি কী বলেছেন না বলেছেন তাতে কিছু আসে যায় না।

আরেক মেয়র প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, উনি কি করে এ ঘোষণা দিলেন সেটা জানতে কেন্দ্রে চিঠি দেব।

অভিযোগ এবং প্রার্র্থীদের এসব বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, ‘২০১৪ সালেও দলের সিদ্ধান্ত ছিল জনপ্রিয় একজনকে সমর্থন দিতে। সে অনুযায়ী জেলা আ.লীগ স্থানীয়ভাবে বসে আলোচনা করে ডা. শফিকুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছে।’ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ‘অনৈতিক সুবিধা নিতে ব্যর্থরা এসব ছড়াচ্ছে। একক সিদ্ধান্ত হলে তো সভায় থাকা অন্যরা প্রতিবাদ করত।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

৯ মার্চ অনুুষ্ঠিত হবে পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন। প্রার্র্থীদের মনোনয়ন দাখিল করতে হবে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এবারের নির্বাচনে মোট ৫ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মাঠে আছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম