বই মেলা ২০২৪
নতুন বইয়ে চোখ, কমেছে জঞ্জাল
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কয়েকদিন বইমেলায় যে জঞ্জালের স্তূপ ছিল রোববার চতুর্থ দিনে এসে সেখান থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলেছে। পাঠক, প্রকাশক, লেখক সবাই এদিন তাদের স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। সন্ধ্যার সময় মেলায় পাঠকদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। নানাবয়সি পাঠকের চোখ এখন নতুন বইয়ে। খুঁজে খুঁজে বই কিনছেন তারা। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে মেট্রোরেল চলাচলের শব্দ নতুন এক দ্যোতনা। অনেক পাঠক মেট্রোরেলে করে আসছেন। আবার বইমেলায় ঘুরে বই সংগ্রহ করে ফিরেও যাচ্ছেন। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
এদিন বিভিন্ন প্রকাশনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তালিকায় থাকা বই থেকে ৫০-৬০ ভাগ বইমেলায় চলে এসেছে। আগামী, অবসর, অন্যপ্রকাশ, সময়, অনন্যা, প্রথমা, ঐতিহ্য, কথাপ্রকাশ, অনিন্দ্য, ইত্যাদি, অন্বেষাসহ বেশিরভাগ প্রকাশনা সংস্থা তাদের নতুন বই নিয়ে এসেছে। তার সঙ্গে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে আরও নতুন বই। উৎস প্রকাশনীর প্রকাশক মোস্তফা সেলিম যুগান্তরকে বলেন, এবারের মেলায় অনেকগুলো বিষয় ইতিবাচক। রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, মেট্রোরেলে যাতায়াতের সুযোগ-সব মিলিয়ে বইমেলা এবার বেশ ভালো হবে।
অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, বইমেলা শুধু শুরু হয়েছে। তারপরও আমরা পাঠক-ক্রেতাদের সমাগম দেখছি। এটি নিঃসন্দেহে এবারের বইমেলা ভালো হওয়ার ইঙ্গিত।
কথাপ্রকাশের ব্যবস্থাপক ইউনূস আলী বলেন, শুক্র ও শনিবার বইয়ের বিক্রি ভালো ছিল। রোববার যারা এসেছেন তাদেরও বেশিরভাগকে ক্রেতা হিসাবে দেখছি।
মেট্রোরেলে মিরপুর থেকে বইমেলায় এসেছেন আফতাব হোসেন। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কারণে মিরপুর থেকে বইমেলায় আসতে এক-দেড় ঘণ্টা বেঁচে যাচ্ছে। এটা আমরা ভাবতেই পারিনি। মেলা থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণের নতুন বই সংগ্রহ করেছি। পরে আরও নতুন বই সংগ্রহ করব।
এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ বইমেলায় কয়েক মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ চলে যায়।
বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : কাঙাল হরিনাথ মজুমদার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তপন মজুমদার। আলোচনায় অংশ নেন জাফর ওয়াজেদ ও আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন। আলোচনার শুরুতে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের জীবন ও কর্মভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্রকার ও লেখক তানভীর মোকাম্মেল, শিশুসাহিত্যিক বেণীমাধব সরকার, গবেষক কাজল রশীদ শাহীন এবং কবি ফারুক আহমেদ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আনিসুল হক, ফারুক মাহমুদ ও ঝর্না রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরী। এছাড়া ছিল অনুপম বিশ্বাসের পরিচালনায় বেসিক একাডেমি অব ইয়োগিক অ্যাকুস্টিক ট্রেডিশনাল ইন্সট্র–মেন্ট ও সাজেদুল ইসলাম ফাতেমীর পরিচালনায় ‘নকশিকাঁথা’র সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন ফরিদা পারভীন, চন্দনা মজুমদার, আব্দুল লতিফ শাহ, আরিফ দেওয়ান ও সরকার আমিরুল ইসলাম।
এদিন নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৬৬টি। এর মধ্যে রয়েছে-বাংলা একাডেমি থেকে ‘প্রাণের মেলায় শেখ হাসিনা’, ‘শেখ হাসিনার স্বপ্নকথা’, গণতন্ত্রের মনোকন্যা শেখ হাসিনা’, প্রথমা থেকে প্রকাশ হয়েছে বদিউল আলম মজুমদারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রাজনীতি, একই প্রকাশনী থেকে তাজউদ্দীন আহমদের সমাজ ও রাষ্ট্রভাবনা নির্বাচিত বক্তৃতা ১৯৭১-৭৪, মাওলা ব্রাদার্স থেকে মশিউল আলমের ‘তুয়া ও ভয়ংকর বিড়ালেরা’। এছাড়া রয়েছে মো. আতাউর রহমানের ‘মুক্তিযুদ্ধে চলন বিলাঞ্চলের ইতিহাস’ ও মুর্তজা বশীরের ‘একুশের লেখা একুশের আঁকা’।