মানিকগঞ্জে নিপাহ ভাইরাসে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যুগান্তর প্রতিবেদন ও মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। রোববার রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। দেশে চলতি বছরে ভাইরাসটিতে এটিই প্রথম মৃত্যু। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মানিকগঞ্জের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি একজন মধ্যবয়সি পুরুষ। রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি খেজুরের কাঁচা রস খেয়েছিলেন।
মানিকগঞ্জের জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. লুৎফর রহমান যুগান্তরকে জানান, মারা যওয়া ব্যক্তির নাম বাবুল হোসেন। তিনি সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মান্তা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মাইনুদ্দিনের ছেলে। তিনি ব্যবসা করতেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে খেজুরের রস খেয়ে অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি (পপুলার) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রেফার করেন।
এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারের বরাত দিয়ে মানিকগঞ্জের পুটাইল ইউপি চেয়ারম্যন মহিদুর রহমান মহিদ জানান, ১৫ দিন আগে বাবুল হোসেন খেজুরের রস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে পুটাইল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন জানান, এর আগে ১৬ জানুয়ারি তার ওয়ার্ডের ঘোস্তা জাহাঙ্গীরনগর গ্রামে খেজুরের রস খেয়ে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নকিমুদ্দিনের ছেলে লুৎফর রহমান (২৭)। তবে আইইডিসিআর জানিয়েছে, যেহেতু মারা যাওয়া ব্যক্তির নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়নি, তাই এ মৃত্যু যে নিপাহ ভাইরাসে হয়েছে, এমনটা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
দেশে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সাধারণত খেজুরের কাঁচা রস পানের মাধ্যমে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য রাখে আইইডিসিআর। প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে রোববার পর্যন্ত ৩৪০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৪১ জন মারা গেছেন। আইইডিসিআর সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন ১৪ জন। এর মধ্যে মারা যান ১০ জন। রোগী অনুপাতে মৃত্যুহার ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এর আগে নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আইইডিসিআর আয়োজিত এক সভায় আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকিবিষয়ক একটি তথ্যনির্ভর উপস্থাপনা তুলে ধরেন। উপস্থাপনায় ওই অধ্যাপক জানান, নিপাহ মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস। এ ভাইরাসের বাহক টেরোপাস (ফল আহারী) গোত্রীয় বাদুড়। মানুষের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় মালয়েশিয়ায় ১৯৯৮ সালে।
তাহমিনা শিরীন বলেন, বাংলাদেশে ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় নিপাহ ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব চিহ্নিত হয়। এর পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে হলে খেজুরের কাঁচা রস পান থেকে বিরত থাকতে হবে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৫-৭ দিন পর এর লক্ষণগুলো দেখা যায়। এর লক্ষণ হলো জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, বমি, গলাব্যথা, মাথা ঘোরা, তৃষ্ণা, বেহুঁশ হওয়া, অসংলগ্ন প্রলাপ প্রভৃতি। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক বাদুড়। এ ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো অবস্থাতেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না। তবে খেজুরের রস সিদ্ধ করে বা গুড় বানিয়ে খাওয়া যাবে। খেজুরের রস ছাড়াও বিভিন্ন ফলের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। আমরা যেসব ফল বা সবজি না ছিলে খাই, যেমন: টমেটো, বরই, পেয়ারা, স্ট্রবেরি-সেগুলো অবশ্যই সাবান দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে। আর যেসব ফল ছিলে খাই, সেগুলো পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। বাদুড় খেয়েছে-এমন কোনো ফল খাওয়া যাবে না।