১২ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ
শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল ঠান্ডায় স্থবির জনজীবন
পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ৫ দশমিক ৮, এ মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন * কুড়িগ্রামে ৬ দশমিক ৮ * ৩১ জানুয়ারি আবার বৃষ্টি হতে পারে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই শীত মৌসুমে সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামসহ দেশের ১২ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। উত্তরাঞ্চলে শুক্রবার শীতের প্রকোপ আরও বাড়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শনিবার ও রোববার তাপমাত্রা তেমন একটা বাড়বে না। তবে এর পর থেকে বাড়তে পারে। আর রাজধানীর তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। এদিকে তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, শুক্রবার পঞ্চগড়সহ পুরো রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বইছিল শৈত্যপ্রবাহ। রংপুর বিভাগ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও নওগাঁ জেলায়ও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে গণ্য করা হয়। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের জনপদগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামের তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৮, নওগাঁর বদলগাছির ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তবে শুক্রবার রাজধানীতে শীতের প্রকোপ খানিকটা কম ছিল। এ দিন রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি। গত বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। ৩১ জানুয়ারির দিকে আবার বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস।
পঞ্চগড় : টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়। শুক্রবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায়ও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়াবিদ রাসেল শাহ জানান, এটা এ মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, শুক্রবারের তাপমাত্রাটা মনে হয়েছে জিরোতে নেমে এসেছে। এত ঠান্ডা আগে কখনো দেখিনি।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যানুযায়ী, গত ২৩ জানুয়ারি থেকেই এ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক। বৃষ্টির মতো ঝরছে বরফ শিশির। হিম বাতাসে কনকনে ঠান্ডা। শীতের তীব্রতায় জর্জরিত শিশু ও বৃদ্ধরা। লাগাতার শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে খেটে খাওয়া মানুষদের। কাজকর্ম কমে যাওয়ায় দিন কাটছে অভাব-অনটনে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে নিম্নআয়ের মানুষের শীত উপেক্ষা করেই কাজে যেতে হচ্ছে।
ইসলামবাগের বাসিন্দা গৃহিণী সাবরিনা আক্তার স্মৃতি বলেন, এ বছরের সবচেয়ে কঠিন ঠান্ডা বুঝি আজকে। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র, ঘরের মেঝে পর্যন্ত বরফের মতো মনে হচ্ছে। হাত-পা অবশ হয়ে আসার মতো।
সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছে। বিশেষ করে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক শিশু। শীত বাড়লে এই রোগ আরও বাড়বে। একই সঙ্গে চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার মতো রোগও বাড়ছে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, এবারও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে শুক্রবার সকাল ৯টায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে ঠান্ডা ও শীতের দাপটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি। তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় শীতের তীব্র কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী তীরবর্তী চার শতাধিক চরাঞ্চলের মানুষ। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকায় জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের ২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের হোসেন আলী বলেন, ২২ দিন ধরে ঠান্ডার কারণে কাজকর্ম করতে পারছি না। আমরা দিন এনে দিন খাই। আমাদের সমস্যা হচ্ছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখের পর তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।