Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ইউনাইটেডে শিশু আয়ানের মৃত্যু

ব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতামতের অপেক্ষায় পুলিশ

আসামিদের গ্রেফতার না করায় ক্ষুব্ধ পরিবার * মিলেছে চিকিৎসায় অবহেলার প্রাথমিক প্রমাণ

Icon

ইমন রহমান

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতামতের অপেক্ষায় পুলিশ

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে খতনা (মুসলমানি) করানোর সময় অবহেলাজনিত কারণে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার ভাগ্য ঝুলে আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মতামতের ওপর। মৃত্যুর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে মতামত দেওয়ার অনুরোধ করেছে পুলিশ।

১৬ জানুয়ারি আদালতের অনুমতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে করা আবেদনে চারটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো-শিশু আয়ানের মৃত্যুর সঠিক কারণ, ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যু হয়েছে কিনা, অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে কিনা এবং দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসকরা প্রকৃতপক্ষে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত কিনা। ওই প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করছে মামলার ভাগ্য। তবে সর্বশেষ রোববার পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন পায়নি পুলিশ।

আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠায় হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করছেন শিশু আয়ানের স্বজনরা। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার না করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আয়ানের বাবা মো. শামীম আহমেদ যুগান্তরকে অভিযোগ করে বলেন, বারবার বাড্ডা থানায় গিয়ে অনুরোধ করলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়নি। এই সুযোগে আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে। কিন্তু তারা বারবার বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর ব্যবস্থা নেবেন। ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্তের পর কেন তারা ব্যবস্থা নেবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চিকিৎসকদের পক্ষে অবস্থান নেবে এটাই তো স্বাভাবিক’ উল্লেখ করে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।

তবে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে এ ধরনের ঘটনার সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে আসামি গ্রেফতার করতে হবে। এ বিষয়টি টেকনিক্যাল, ডাক্তার জড়িত কিনা, তা পুলিশ ১ পার্সেন্টও বলতে পারবে না। এখানে বিশেষজ্ঞ মতামত লাগবে। ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে মতামত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। মতামত পাওয়ার পরই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হসপিটাল) ডা. আবু হুসাইন মোহাম্মদ মঈনুল আহসান যুগান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি কোনো নির্দেশনা পাইনি।’

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মিলেছে অবহেলার প্রমাণ : বাড্ডা থানায় করা মামলা তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, অভিযুক্ত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসায় অবহেলার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, চিকিৎসকরা আয়ানকে অচেতন করতে যে মেডিসিন ব্যবহার করেছেন তার তিনটি জটিলতা থাকে। এর মধ্যে একটি হলো যাদের অ্যাজমা আছে তাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং হার্ট অ্যাটাক হয়। আয়ানের ক্ষেত্রে সেটিই হয়েছে বলে মনে করছেন এক্সপার্টরা। তবে এসব ক্ষেত্রে অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। যদি প্রেসার বাড়ে বা হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা মনে হয়, তাৎক্ষণিক মেডিসিন ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ ক্লোজ অবজারভেশনে থাকার কথা ছিল। কিন্তু আয়ানের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণটি সঠিকভাবে করেনি চিকিবৎসকরা। তারা তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন। এছাড়া ধারণা করা হচ্ছে, ইনজেকশনের ডোজও শতভাগ বেশি পড়েছিল।

সুন্নতে খতনা (মুসলমানি) করানোর জন্য শিশু আয়ানকে ৩১ ডিসেম্বর সকালে বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ফুল অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়ার পর আর চেতনা ফেরেনি আয়ানের। পরে তাকে পাঠানো হয় ইউনাইটেড হাপাতালের অন্য শাখায়। সেখানে পিআইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রেখে ৮ দিন পর আয়ানকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি বাড্ডা থানায় আয়ানের বাবার করা মামলায় আসামি করা হয় স্পেশালিস্ট অ্যানেস্থেশিয়ার ডাক্তার সাইদ সাব্বির আহম্মেদ (বিএমডিসি রেজি. নং-এ৭৮৮৬৪), অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাক্তার তাসনুভা মাহজাবিন (এফসিপিএস, সার্জারি), হাসপাতালের অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ ডাক্তার ও কর্মকর্তাকর্মচারীদের।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম