Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বৈধ ২৬২ : অবৈধ অগণিত

বরিশালে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে চলছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক

Icon

সাঈদ পান্থ, বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশালে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে চলছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক

বরিশালজুড়ে ভুয়া ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট, মানহীন মেশিনসংবলিত ল্যাব, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই প্যাথলজির ভুয়া রিপোর্ট প্রদানসহ দালালনির্ভর ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি। এসব প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পড়ে গ্রামাঞ্চল ও শহরতলি থেকে আসা রোগীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। বরিশালের ১০ উপজেলায় ১৩৩ ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৯ বৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। কিন্তু এর বাইরে শত শত অবৈধ ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক বাণিজ্য করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অভিযান চললেও স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে ব্যবসা চলছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর সদর রোড, গির্জা মহল্লা মোড়, আগরপুর রোড, কাকলির মোড়, বাটারগলি, বিবির পুকুর পাড়, অশ্বিনী কুমার হল চত্বর, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের সামনে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজের বিনিময়ে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার তুমুল প্রতিযোগিতা চলে তাদের মধ্যে। দালালরা ওতপেতে থাকে নগরীর রুপাতলী, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ টার্মিনালে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা রোগীদের জন্য। দালালরা তাদের পছন্দের ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের নিয়ে গিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

জানা গেছে, নগরীতে সব থেকে বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে। এখানে ৩০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটিতেই জড়িত আছেন হাসপাতালের কোনো না কোনো চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া কিছু চিকিৎসক প্রতি রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর পাচ্ছেন সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন। এসব চিকিৎসকের কাছ থেকে রোগী নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসতে রয়েছেন মার্কেটিং কর্মী নামধারী দালাল। ঠিক একই অবস্থা বরিশাল সদর হাসপাতালের সামনেও। এ হাসপাতালের সীমানা থেকে প্রায় ৫০ গজের মধ্যেই রয়েছে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক। এসব প্রতিষ্ঠানের নেপথ্যেও রয়েছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মচারী। অভিযোগ রয়েছে, শুধু ডাক্তার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীই নন, একের পর এক গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রভাবশালীরা। তাদের নেতৃত্বেই এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত রোগীদের জিম্মি করে গলাকাটা হচ্ছে।

এক ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন ঝালকাঠির সদর উপজেলার বিনয়কাঠির বাসিন্দা হাকিম হাওলাদার জানান, মাকে নিয়ে নগরীর বাটার গলিতে এলে দালালের খপ্পরে পড়েন। প্রথমে দালালরা ভুল বুঝিয়ে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে ভুয়া ডাক্তার দেখানো শেষে প্রেসক্রিপশনের প্যাডে ৮টি পরীক্ষা করতে বলে ৬ হাজার ৩০০ টাকা ও ডাক্তার ফি আরও ৮০০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু তার মায়ের রোগ ভালো হয়নি। বরিশাল সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, নগরীতে কত ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে তার সংখ্যা জানার জন্য আমরা সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করেছিলাম। তবে সিভিল সার্জন থেকে আমাদের বলা হয় স্বাস্থ্য বিভাগে যেতে। সেখানে আবেদন করার পর তারা বলছে, হালনাগদ নেই। তারা মাঠে নেমে এর একটি তালিকা প্রস্তুত করবে। কিন্তু আজও আমরা তালিকা পাইনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পর সারা দেশে অভিযান হলেও বরিশালে কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। আমরা মনে করছি কোনো সমঝোতার কারণে এমনটা হয়েছে।

বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে প্রায়ই আমরা অভিযান পরিচালনা করি। বর্তমানেও অভিযান চলমান রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম