Logo
Logo
×

শেষ পাতা

২৪ ঘণ্টায় ২২ করোনা রোগী শনাক্ত

রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্তের হার

ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বড় আকারে বাড়তে পারে : জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্তের হার

নতুন বছরের শুরুতেই দেশে করোনা রোগী বাড়তে শুরু করছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্তের হার। চলতি মাসের গত ১০ দিনের মধ্যে ৮ দিন আক্রান্তের হার ৫ শতাংশের ঘরে রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আরও ২২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত রোগীর হার ৫ দশমিক ১২ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী টানা তিন থেকে চার সপ্তাহ করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এর উপরে উঠলেই সংক্রমণ রোধে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এমনটা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা ব্যক্তিদের টিকা নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া দৈন্দিন করোনা সংক্রমণ বিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়- ১০ জানুয়ারি থেকে দৈনিক শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ঘরে থাকছে। মাঝে ১৩ ও ১৮ জানুয়ারি ২ দিন ৫ শতাংশের নিচে নামলেও ১২ জানুয়ারি এই হার বেড়ে ৭ দশমিক ৪ এবং ১৭ জানুয়ারি ৬ দশমিক ২১ শতাংশে ওঠে। এরই মধ্যে দেশে ভাইরাসটির অমিক্রন ধরনের উপধরন জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের নমুনায় জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে। তাদের কেইউ দেশের বাইরে ভ্রমণ করেননি।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে কড়া নজরে রেখেছে এবং সংস্থাটি করোনার এই উপধরনকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা ‘আগ্রহের বৈকল্পিক’ হিসাবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ধরন জেএন.১-এর লক্ষণ আগের ধরনগুলোর মতোই। যেমন- জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, ক্লান্তি ইত্যাদি। এ ছাড়া গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা, ডায়ারিয়া ও বিভ্রান্ত বোধ।

এর আগে ৩ জানুয়ারি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জানায়, বিশ্বের বেশ কিছু দেশ কোভিড-১৯ সংক্রমণ আর এই ভ্যারিয়েন্ট বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেছে। এর প্রেক্ষিতে জনসাধরণকে মাস্ক পরাসহ ভাইরাসটি প্রতিরোধে অন্যান্য জনস্বাস্থ্যমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেয় কমিটি। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কমিটির পরার্শ আমলে নিয়ে মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামান্ত লাল সেন জানান, দেশে হঠাৎ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষকে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামি দুই বছর আড়াই কোটি মানুষকে চতুর্থ ডোজ দেওয়া হবে। এ বছর পাবে এক কোটি ২৫ লাখ মানুষ। বাকি এক কোটি ২৫ লাখ মানুষ টিকা পাবে আগামি বছর।

জনস্বাস্থ্যবিদ ডাক্তার মুশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দেশে বর্তমানে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম। ফলে ৫ শতাংশে উঠলেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলা যাবে না। পরীক্ষা বাড়লে আক্রান্ত হার আরও বাড়বে। এই মুহূর্তে পরিস্থতি আশঙ্কাজনক না। শীতের সময় খুব বেশি বাড়বেও না। তবে ফেব্রুয়ারি শেষে দিকে বড় আকারে বাড়তে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঝুঁকি কম থাকলেও বৈজ্ঞানিকভাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে নতুন মিউটেশন হয়ে (অমিক্রনের জেএন.১ উপধরন) এটা দ্রুত ছড়াচ্ছে। উপধরনটি টিকা ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

আরও ২২ জনে দেহে করোনা শনাক্ত : এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ভাইরাজটিতে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৭৯ জনের। এদিন নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ২২ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৭১১ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৮৫টি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৩০টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক কোটি ৫৬ লাখ ৩৯ হাজার ২২৫টি। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৫ দশমিক ১২ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দুজন আইসোলেশনে এসেছেন এবং আইসোলেশন থেকে কেউ ছাড়পত্র পাননি। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন চার লাখ ৫২ হাজার ৮৩১ জন এবং আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন চার লাখ ২৩ হাজার ৫৯৮ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৯ হাজার ২৩৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম