Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া

টাকার মান স্থিতিশীল ও পাচার বন্ধ করা জরুরি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

টাকার মান স্থিতিশীল ও পাচার বন্ধ করা জরুরি

দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নতুন মুদ্রানীতিতে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সঠিক হলেও এগুলো বাস্তবায়ন কতটুকু হবে-তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, এগুলোর মাধ্যমে দ্রুত কোনো সমাধান মিলবে না। মূল্যস্ফীতির হার খুব একটা কমবে না। উলটো সুদহার বেড়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতিতে আরও চাপ বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতির হার কমাতে হলে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন রোধ করতে হবে। দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। পণ্যের আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। বাজারে নিত্যপণ্যের দামে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। সব মিলে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। অর্থনৈতিক সংকটও কাটবে না।

বুধবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে ঘোষিত মুদ্রানীতি সম্পর্কে তারা এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নীতি সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির হার কমানো যাবে না। এতে বরং উলটো ফল হতে পারে। সুদের হার বেড়ে যাবে। টাকার প্রবাহ কমে যাবে। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে ও উৎপাদন কমবে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতিতে আরও চাপ বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতির হার বর্তমানে কিছুটা কমলেও সেগুলো শীতের পণ্যের সরবরাহ বাড়ার কারণে কমেছে। এ ধারাবাহিকতা পরে আর থাকবে না। কারণ বৈশ্বিক পরিস্থিতি নতুন সংকটে মোড় নিচ্ছে। এতে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়তে পারে। কারণ জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় ও গন্তব্যে যেতে সময় বেশি নেওয়ায় আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের বাজারেও আসতে পারে।

তিনি আরও বলেন, টাকার প্রবাহ কমালে বিনিয়োগ কমে গিয়ে কর্মসংস্থান কমে যাবে। এতে বেকারত্ব বাড়বে। গত দুই বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। কিন্তু কমেনি। উলটো আরও বেড়েছে। এখন সুদের হার যেভাবে বাড়ানো হচ্ছে, তা দেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় আঘাত করবে। এটি হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না। সংকটও কাটবে না।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির হার কমাতে যে পথে হাটা উচিত, সে পথে কেউ যাচ্ছে না। এ জন্য আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। এটি কমালে আমদানি পণ্যের খরচ কমে যাবে। তখন আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির হারও কমে যাবে। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে সহনীয় রাখতে হবে। টাকার মান বেশি কমলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেশি বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ে। ডলার দাম স্থিতিশীল রাখতে দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে, রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটি কঠিন হলেও এর কোনো বিকল্প নেই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, মুদ্রানীতিতে যেসব কৌশল নেওয়া হয়েছে সেগুলো ঠিক হলেও এগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে। এগুলো দিয়ে চট করে সংকটের কোনো সমাধান আসবে না। এগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করলে সংকট কিছুটা হলেও কাটতে শুরু করবে। এখন যে অবস্থা তাতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কোনো বিকল্প নেই। তবে শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে সংকটের সমাধান করা যাবে না। এর জন্য সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির হার কমাতে এখন জরুরিভিত্তিতে নজর দেওয়া উচিত ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের দিকে। ডলারের দাম বাড়লে ও টাকার অবমূল্যায়ন হলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে। এটি আগে রোধ করতে হবে। টাকার মান যাতে ডলারের বিপরীতে খুব বেশি না কমে সেদিকে নজর দিতে হবে। এজন্য দেশ থেকে যেসব টাকা পাচার হচ্ছে সেটি জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। তাহলে ডলারের প্রবাহ বেড়ে টাকার মান স্থিতিশীল হবে।

তারমতে, শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। এজন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনো সিন্ডিকেট করতে দেওয়া যাবে না। সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। পণ্যমূল্য অযৌক্তিকভাবে না বাড়লে মূল্যস্ফীতির হারও কিছুটা সহনীয় থাকবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম