Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এসডিজি বাস্তবায়ন চিত্র

বাংলাদেশ পিছিয়ে ৪৮ সূচকে

জিইডির প্রতিবেদন: মূল্যায়নে উপাত্তের ঘাটতি আছে ৪০টিতে * সঠিক পথে এগোচ্ছে ৪৫, লক্ষ্য অর্জন ১৪ সূচকের

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ পিছিয়ে ৪৮ সূচকে

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ৪৮টি সূচকে এখনো পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এছাড়া ৪০টি সূচক মূল্যায়নে কোনো তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সঠিক পথে আছে ৪৫টি সূচক। ইতোমধ্যে লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে ১৪টি সূচকের। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। এটি ২০২২ সাল পর্যন্ত মূল্যায়নের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। জিইডির পক্ষে বলা হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হয়। যেমন এলডিসি থেকে উত্তরণ, কোভিড-১৯, বারংবার সংঘটিত আন্তর্জাতিক সংকট এসডিজির অগ্রগতিকে শ্লথ করেছে। এত কিছুর পরও বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে পিছিয়ে থাকা সূচকগুলোয় বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত জিইডির সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহম্মদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, পৃথিবীব্যাপী এসডিজিতে ফাইন্যান্স গ্যাপ রয়েছে। যেটি আমাদের দেশেও আছে। ফলে অনেক সূচকের ক্ষেত্রে যে পরিমাণে বিনিয়োগ দরকার ছিল, সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে যেসব সূচক কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে, সেগুলোয় নজর দিতে হবে। তবে সার্বিকভাবে এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ভালো করেছে। এখন এসডিজি স্কোর হচ্ছে ১০৫। এটি খারাপ অবস্থান নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২২ সালে যখন এসডিজি মূল্যায়ন করা হয়, তখন সূচক কম থাকলেও এখন বেড়ে ২০৫টি হয়েছে।

এসডিজি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসডিজির প্রধানত ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে এসব সূচকের অবস্থান। এর মধ্যে অভীষ্ট-১ (সর্বত্র সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান)। এর মধ্যে একটিতে পিছিয়ে আছে। এছাড়া সঠিক পথে আছে সাতটি, হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি আছে তিনটি এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে একটি সূচকের। অভীষ্ট-২ (ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা, উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার)-এর ক্ষেত্রে চারটি সূচকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এছাড়া সঠিক আছে চারটি, হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তে ঘাটতি আছে দুটি এবং লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে একটি সূচকের। অভীষ্ট-৩ (সব বয়সের সব মানুষের জন্য সুস্থ জীবন ও কল্যাণের নিশ্চয়তা প্রদান)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে অর্থাৎ আরও নজর দেওয়া প্রয়োজন দুটি সূচকে। এছাড়া সঠিক পথে আছে পাঁচটি, হালনাগাদ উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে একটি এবং লক্ষ্য অর্জন হয়েছে একটি সূচকের ক্ষেত্রে। অভীষ্ট-৪ (সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ অবারিতকরণ)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে ছয়টি সূচকে। এছাড়া সঠিক পথে সাতটি, উপাত্তের ঘাটতি আটটিতে এবং লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে তিনটি সূচকের ক্ষেত্রে। অভীষ্ট-৫ (জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সব নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে চারটি, সঠিক পথে আছে দুটি, উপাত্তের ঘাটতিতে সাতটি এবং লক্ষ্য অর্জন হয়েছে দুটি সূচকের। অভীষ্ট-৭ (সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করা)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই একটিও, সঠিক পথে পাঁচটি এবং লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে একটি সূচকের।

অগ্রগতি প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভীষ্ট-৮ (স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল চাকরি এবং সবার জন্য শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টি)-এ পিছিয়ে আছে চারটি, সঠিক পথে একটি, হালনাগাদ উপাত্তের ঘটতিতে চারটি এবং লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে তিনটি সূচকের। অভীষ্ট-৯ (অভিঘাতসহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়নের প্রসার ও উদ্ভাবন উৎসাহিত করা)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে দুটি, সঠিক পথে একটি, উপাত্তের ঘাটতিতে আছে চারটি এবং দুটি সূচকের লক্ষ্য অর্জন হয়েছে। অভীষ্ট-১০ (দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্দেশীয় অসমতা হ্রাসকরণ)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে দুটি, সঠিক পথে তিনটি, উপাত্তের ঘাটতিতে পাঁচটি এবং লক্ষ্য অর্জন হয়নি একটিরও। অভীষ্ট-১১ (অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনপদ গড়ে তোলা)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে দুটি, সঠিক পথে একটি এবং উপাত্তের ঘাটতিতে একটি সূচক। অভীষ্ট-১২ (টেকসই উৎপাদন ধারা ও পরিমিত ভোগ নিশ্চিতকরণ)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে একটি এবং সঠিক পথে আছে একটি সূচক। অভীষ্ট-১৩ (জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ)-এর ক্ষেত্রে সঠিক পথে এগোচ্ছে একটি, উপাত্তের ঘাটতিতে একটি সূচক। অভীষ্ট-১৪ (টেকসই উন্নয়নের জন্য নিরাপদ সাগর, মহাসাগর এবং সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ ও টেকসই ব্যবহার)-এর ক্ষেত্রে উপাত্তের ঘাটতিতে আছে দুটি এবং লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে একটি সূচকের। অভীষ্ট-১৫ (স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা এবং টেকসই ব্যবহারে পৃষ্ঠপোষণা, টেকসই কর ব্যবস্থাপনা, মরূকরণ প্রক্রিয়া মোকাবিলা ইত্যাদি)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে একটি, উপাত্তের ঘাটতিতে একটি এবং সঠিক পথে এগোচ্ছে একটি সূচক। অভীষ্ট-১৬ (শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার প্রচলন, সবার জন্য ন্যায়বিচারের পথ সুগম করা এবং সব স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ)-এর ক্ষেত্রে পাঁচটি, সঠিক পথে দুটি, উপাত্তের ঘাটতি চারটি এবং লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে একটির। এসডিজি অভীষ্ট-১৭ (বৈশ্বিক অংশীদারত্ব উজ্জীবিতকরণ ও বাস্তবায়নের উপায়গুলো শক্তিশালীকরণ)-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে পাঁচটি, সঠিক পথে সাতটি, ভিত্তি উপাত্তের ঘাটতিতে আছে দুটি এবং দুটি সূচকের লক্ষ্য অর্জন হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, কোভিড-১৯-এর বিরূপ প্রভাব এবং সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের পথে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সম্মান অর্জনে সক্ষম হয়েছে। করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার প্রেক্ষাপটে সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়েছে। শুরু থেকেই এ বিষয়ে সরকারের মনোযোগ ছিল এবং সেটি এখনো আছে। বিশ্ব পরিস্থিতি ভালো থাকলে যে কয়েকটি সূচকে পিছিয়ে আছি, সেগুলোও এগিয়ে যেত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম