দুর্গখ্যাত রংপুর বিভাগে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি
হতাশ তৃণমূল নেতাকর্মী * পরাজয়ের নেপথ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল * সমঝোতার রাজনীতিতে সাংগঠনিক সক্ষমতা ধ্বংস
মাহবুব রহমান, রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রংপুর অঞ্চলকে বলা হতো জাতীয় পার্টির দুর্গ। দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি রংপুরে হওয়ায় এ অঞ্চল দলটির দুর্গে পরিণত হয়। কিন্তু এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সেই দুর্গে ভরাডুবি হয়েছে। পরাজয়ের নেপথ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ জনগণের মতামতের মূল্যায়ন না করাকে দুষছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
রংপুর বিভাগের আট জেলার ৩৩টি আসনের জাতীয় পার্টি মাত্র তিনটিতে জয় পেয়েছে। এসব আসনে নৌকা প্রতীক ছিল না বলেই জয় এসেছে। নইলে পরাজয় হতে পারত বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। প্রার্থীরা কোথাও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেননি। সমঝোতার রাজনীতিতে সাংগঠনিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে বলছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া প্রচার ও তৃণমূলে সমন্বয় এবং শীর্ষ নেতার সঠিক নির্দেশনা না থাকাকেই দায়ী করেছেন অনেকেই। দলের এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না। ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে দলের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত তারা।
এদিকে সমঝোতার ২৬ আসনের মধ্যে রংপুর বিভাগে ছিল ৯টি। এর মধ্যে রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং কুড়িগ্রাম-১ আসনে একেএম মোস্তাফিজুর রহমান জিততে পেরেছেন। হেরেছেন নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমান, রংপুর-১ আসনে হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ আসনে ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনে আব্দুর রশিদ সরকার।
জানা যায়, রংপুর জেলায় গত নির্বাচনে দুজন জয়ী হলেও কেবল জিএম কাদের জিতেছেন। রংপুর-১ আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রের কাছে নাস্তানুবাদ হয়েছেন হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা।
লালমনিরহাটের তিন আসনেই নৌকা জিতেছে। জাতীয় পার্টির কর্মীরা এখন হতাশ হয়ে বিভিন্ন দলে ভিড়ছেন। একই চিত্র নীলফামারীতেও। এ জেলার চারটি আসনেই ভরাডুবি হয়েছে জাতীয় পার্টির। নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল এবং নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমানকে ছাড় দিয়ে ওই দুটি আসনে নৌকা প্রার্থী রাখেনি আওয়ামী লীগ। তারপরও জিততে পারেনি জাতীয় পার্টি।
গাইবান্ধায় এবার পাঁচটি আসনের দুটিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হলেও সংসদে দাঁড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও আব্দুর রশিদ সরকারের। বাকি তিনটি আসনে নৌকার কাছে পাত্তাই পাননি জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
এদিকে কুড়িগ্রামের চারটি আসনের দুটিতে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছাড় দিলেও জিতেছেন কেবল কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান। ছাড় পাওয়া আরেক প্রার্থী পনির উদ্দিনের ভরাডুবি হয়েছে।
পীরগাছা উপজেলার শহিদুল ইসলাম ও জিল্লার রহমান এবং রংপুর সদরের আনিছ মিয়া, ঝন্টু মিয়াসহ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, রংপুর অঞ্চলে জাতীয় পার্টি এখন কয়েকজন নেতার হাতে জিম্মি। এ কারণে গত স্থানীয় নির্বাচনসহ রোববারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরূপ ফলাফল হয়েছে। দলের একেক সময় একেক নীতি, নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ ও সমঝোতার রাজনীতির কারণে এমন করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।