বিআইআইএসএসের সেমিনার
ন্যূনতম মজুরি দারিদ্র্যসীমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি উচ্চতর দারিদ্র্যসীমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শ্রমিক সংগঠনগুলোর ২৩ হাজার টাকার প্রস্তাবও বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অযৌক্তিক। তবে এটি ১৫ হাজার ৩২৮ টাকা (৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের ক্ষেত্রে) হলেও অত্যন্ত ভালো হতো। শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোসহ পোশাক কেনার ক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতারা নৈতিকতা চর্চা করলে এই মজুরি দেওয়া সম্ভব হবে।
রোববার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএসএস-এর গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির। এতে বলা হয়, করোনা মহামারি-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত। পোশাকের প্রধান ক্রেতা দেশ ইউরোপ ও আমেরিকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি ক্রেতাদের ক্রয় আচরণে প্রভাব ফেলেছে। পুরোনো পোশাকের স্টক তৈরি হওয়ায় তারা নতুন অর্ডার দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের মূল্য এবং শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা দুটোই কম। এ দুটো বাড়ানো না গেলে মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়। কারখানাগুলোর মধ্যে অসম প্রতিযোগিতার কারণে পোশাকের মূল্য বাড়ানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। এ কারণে আবার গার্মেন্টসে নারী শ্রমিকদের কারখানা কমতে শুরু করেছে। ২০১৩ সালে ১৭ লাখ নারী শ্রমিক থাকলেও ২০২২-এ তা কমে ১৩ লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। পক্ষান্তরে একই সময়ে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ১৩ লাখ থেকে বেড়ে ২১ লাখে দাঁড়িয়েছে।
বিআইআইএসএস-এর চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আযম সরকারের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ-এর সহসভাপতি আকতার হোসেন অপূর্ব, গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শ্রমিকদের শোভন জীবনযাপন ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায় ও বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বৈশ্বিক পদক্ষেপ দেখতে পাইনি।
বিকেএমইএ-এর সহ-সভাপতি আকতার হোসেন অপূর্ব বলেন, ওভারটাইম হিসাব করলে বর্তমানে একজন শ্রমিক ১৫ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পান, যা মূল প্রবন্ধে উত্থাপিত অঙ্কের চেয়ে বেশি।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রপ্তানি আয়ের তথ্যে ব্যাপক ঘাটতি আছে, যার কারণে সঠিক নীতি গ্রহণ করা যায় না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশের ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২১ সালে এক বিলিয়ন ডলার এবং ২০২২ সালে ১২ বিলিয়ন ডলার কম প্রত্যাসিত হয়েছে। এই ১২ বিলিয়ন ডলার কোথায়? অথচ আইএমএফ-এর কিস্তির এক বিলিয়ন ডলারের জন্য কত আর্থিক সংস্কার করতে হচ্ছে। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো শোভন নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, শ্রম অধিকার রক্ষায় এবং শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার আইনগত পরিবর্তন এনেছে এবং শিল্পের সক্ষমতা অনুযায়ী নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করেছে। সম্প্রতি শ্রম অধিকার রক্ষায় আমেরিকার ঘোষিত শ্রম সংঘ বাংলাদেশে শিল্পে শঙ্কা তৈরি করেছে। যদি এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তাতে শ্রমিকদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত স্থায়িত্বের ভারসাম্য নষ্ট করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মশিউর রহমান বলেন, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের আগে সরকারকে শ্রমিকদের স্বার্থ এবং মালিকদের সক্ষমতা দেখতে হয়। শ্রমিকরা ন্যূনতম কত টাকা বেতন পেলে শোভন জীবনযাপন করতে পারবেন এবং উদ্যোক্তারা কত টাকা বেতন দিলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন, সেসব বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই।