রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তায় খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষ্যে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে শাহবাগে পুলিশের তল্লাশি -যুগান্তর
রাত ১২টা। ঢাকার আকাশে আলোর ঝলকানি। আতশবাজির মুহুর্মুহু বিকট শব্দ। কুয়াশা ঘেরা আঁধার সরিয়ে উড়ছে ফানুসের ঝাঁক। খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণে যেন উন্মাতাল গোটা রাজধানীবাসী। এ সময় বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ারে ভেসেছে নগরীর তরুণ-তরুণীদের অনেকে।
খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণের প্রাক্কালে রাজধানীতে একগুচ্ছ নিরাপত্তা নির্দেশনা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বেশকিছু রাস্তায় যান চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে উন্মুক্ত স্থানে নাচ, গানসহ যে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া।
রাত ৮টার পর গুলশান বনানী এলাকাতেও জনসাধারণের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। কিন্তু প্রতি বছরের মতো বর্ষবরণের উন্মাদনায় এসব কাগুজে নির্দেশনার অনেক কিছুই শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে। এক পর্যায়ে অনেক এলাকার নিরাপত্তা কড়াকড়িও ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি গুলশান বনানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে ডিজে পার্টিসহ পাশ্চাত্য সংগীতের মূর্ছনা ও অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন অনেকে।
প্রতিবছরের মতোই এবারও বর্ষবরণের মূল উচ্ছ্বাস ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে। মধ্যরাতে টিএসসি চত্বরে নেমেছিল তারুণ্যের ঢল। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আশপাশের বাসিন্দারাও বর্ষবরণের আনন্দে যোগ দেন। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক ক্লাব ও অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতেও রাতভর চলেছে বর্ষবরণের বিশেষ অনুষ্ঠান।
এদিকে থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। হাতিরঝিল, ধানমন্ডি লেক, রমনা পার্কসহ রাজধানীর বেশকিছু খোলা জায়গা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার সন্ধ্যার পর পরই বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের পানশালা। তবে গুলশান, অল কমিউনিটি ও বনানী ক্লাবসহ খোলা ছিল বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
গভীর রাত পর্যন্ত ছিল বিশেষ পার্টির আয়োজন। থার্টিফার্স্ট নাইট ঘিরে রাজধানীতে বিশেষ ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রোববার বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বিজিবি। এ ক্ষেত্রে যে কোনো নাশকতা বা অপতৎপরতা রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিন দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যদি কেউ ফানুস উড়ায় বা আতশবাজি ফাটায় তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এমন কঠোর বার্তার প্রয়োগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডিবি প্রধান বলেন, ‘নগরবাসীর সংখ্যানুপাতে পুলিশের সংখ্যা কম। তাই, আগে থেকেই পুলিশ সতর্ক বার্তা দেয়। কিন্তু কেউ যদি আইন না মানেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এবার অ্যাকশনে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’
রাত সাড়ে ৮টায় গুলশান-২ নম্বর গোল চক্করে এক সংবাদ সম্মেলনে উচ্ছৃঙ্খলতা পরিহার করে নতুন বর্ষ উদযাপন করার আহ্বান জানান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন। তিনি বলেন, উন্মুক্ত স্থানে কোনো উৎসব বা আতশবাজি ফোটানো যাবে না। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
রাত রাত ১১টার পর গুলশান-২ নম্বরে উপস্থিত হন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলা বা যে কোনো ধরনের হামলার আশঙ্কা নেই। তবুও মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়েছি। সব এলাকায় টহল, সিভিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সোয়াত, র্যাবের ডগ স্কোয়াড রয়েছে।’
তবে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে পটকা-আতশবাজি ফাটিয়ে এবং হাজার হাজার ফানুস উড়িয়ে নতুন বছর-২০২৪ কে স্বাগত জানায়। আতশবাজির ঝলকে রঙিন হয়ে ওঠে ঢাকার আকাশ।