পুলিশি বাধা
বাম গণতান্ত্রিক জোটের ইসি ঘেরাও কর্মসূচি পণ্ড
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পুলিশের বাধায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। রোববার দুপুরে পল্টন থেকে নেতাকর্মীরা নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার উদ্দেশে রওয়ানা করেন। প্রেস ক্লাবের সামনে কদম ফোয়ারা এলাকায় তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। সেখানে তারা অবস্থান নেন এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেন। পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তিতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ঢাকার বাইরেও বরিশাল, যশোর ও ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাম জোটের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম এখান থেকে নির্বাচন কমিশনে যাব এবং আমাদের কথা বলব। সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে আমাদের এখানে আটকে দিয়েছে। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। এ স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার সংগ্রাম করছি আমরা। তিনি আরও বলেন, সরকার ভয়ের রাজত্ব কায়েম করছে। সরকার এমন কিছু আইন করেছে, কথা বললে জেলে যেতে হতে পারে, গুম করে দিতে পারে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর মানে কী? দেশে কি জরুরি আইন জারি হয়েছে? এ আইন অনৈতিক, অন্যায় এবং অসাংবিধানিক। সরকার আমাদের কণ্ঠ রোধ করতে পারবে না। বাংলাদেশে আমরা প্রহসনের নির্বাচন হতে দেব না।
রমনা জোনের শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর সরদার বুলবুল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, যান চলাচলে যাতে কোনো প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে তাই আমরা তাদের বলেছি-আপনাদের কোনো দাবি থাকলে সেটি লিখিত আকারে আমাদের দেন এবং আমরা সেটি নির্বাচন কমিশনের কাছে পৌঁছে দেব। পরে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছেন। যদিও তারা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেছেন। এ সময় আমাদের কয়েকজন নারী ও পুরুষ সদস্য আহত হয়েছেন।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনের একতরফা নির্বাচন দাবি করে তা বাতিলের দাবিতে জেলা বাম গণতান্ত্রিক জোটের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় অভিমুখে বের করা মিছিল পুলিশি বাধায় হতে পারেনি। এর আগে নেতাকর্মীরা নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অভিমুখে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যাত্রা করলে নগরীর লাইন রোডের মুখে পুলিশ তা আটকে দেয়। ব্যানার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সভা করে তারা কর্মসূচির ইতি টানেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ নেতা শাহ আজিজুর রহমান খোকন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল মজুমদার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) জেলা শাখার সমন্বয়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ জেলা শাখার সম্পাদক নৃপেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মহানগর শাখার সভাপতি বিজন সিকদার প্রমুখ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুল হক জানান, আমরা বাধা দেইনি। বিনা অনুমতিতে নগরীর প্রধান সড়ক আটকে কর্মসূচি করায় তা সংক্ষিপ্ত করতে বলেছি।
যশোর ব্যুরো জানায়, বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিল শহরের জজকোর্ট মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ আটকে দেয়। একপর্যায়ে মিছিলটি ঘুরিয়ে নিতে তারা বাধ্য হন। জেলা বাম গণতান্ত্রিক জোট, যশোর জেলা সমন্বয়ক বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি আবুল হোসেন ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক তসলিম উর রহমান। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক জানান, বাধা দেওয়া হয়নি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছিল।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, জেলা নির্বাচন কার্যালয় অভিমুখে বাম গণতান্ত্রিক জোট বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বাধা দিয়েছে পুলিশ। সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ঝিনাইদহ জেলা শাখা। শহরের পায়রা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বর এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ করা হয়। এ সময় বাম গণতান্ত্রিক জোট জেলা শাখার সমন্বয়ক ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল এনাম পল্লব, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক স্বপন বাগচী, বাসদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, সিপিবির সাবেক সভাপতি কাজী ফারুক, যুব ইউনিয়নের সভাপতি আবু তোয়াব অপুসহ বিভিন্ন বাম দলের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।