যুবলীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাই নৌকা জেতানোর দায়িত্বে
বেশকিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কমিটিতে রাখা হয়েছে
হাসিবুল হাসান
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করে বিজয়ী হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন যুবলীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা। কিন্তু তার আসনে আবারও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ।
তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান। এই আসনে ভোটের মাঠে নৌকার প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরী। অথচ নিক্সন চৌধুরীকেই দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করার দায়িত্ব। যুবলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনকে ফরিদপুর জেলার
দায়িত্ব দিয়েছে।
একই অবস্থা শরীয়তপুর-২ আসনেও। যুবলীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. খালেদ শওকত আলী। এবারের নির্বাচনে তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
শরীয়তপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, দলটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। তিনি এবারও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
অন্যদিকে খালেদ শওকত আলী এ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
যাচাই-বাছাইয়ে প্রথমে তার প্রার্থিতা বাতিল হলেও পরে আপিলে ফিরে পান। এই আসনে তিনি নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। অথচ যুবলীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে দেওয়া হয়েছে শরীয়তপুর জেলার আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের জেতানোর দায়িত্ব!
শুধু মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এবং ডা. খালেদ শওকত আলীই নয়, সারা দেশের এমন প্রায় দশজন নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছেন জেলার নৌকার প্রার্থীদের জেতানোর দায়িত্ব।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ এই কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ বেশ কয়েকজন এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলের সবুজ সংকেত থাকায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আরও বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র হয়ে ভোটের মাঠে আছেন।
গত ৮ ডিসেম্বর যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত ১৭৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারম্যান করা হয়েছে সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে। কো-চেয়ারম্যান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও সদস্য সচিব করা হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশাকে।
জানতে চাইলে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান মাইনুল হোসেন খান নিখিল যুগান্তরকে বলেন, এটা হয়তো ভুলে হয়েছে। সামনে এটা আমরা ঠিক করে ফেলব। একই বিষয়ে যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা যুগান্তরকে বলেন, এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার সুযোগ নিয়ে অনেকেই দাঁড়িয়েছে। এখন ১৭ তারিখ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের একটা সুযোগ রয়েছে। এরপরও যারা নির্বাচন করবেন তাদের বিষয়ে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব।
নৌকার বিপক্ষে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসাবে আরও যারা ভোট করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন। তিনি লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে নৌকা নিয়ে লড়ছেন আনোয়ার হোসেন খান। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে পবনের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও পরে আপিলে তিনি আবার প্রার্থিতা ফিরে পান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকা এ নেতাকে যুবলীগ তাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে রেখেছে এবং লক্ষ্মীপুর জেলার দায়িত্ব দিয়েছে।
জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান পবন যুগান্তরকে বলেন, আমি আপিলে আমার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছি এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। তিনি আরও বলেন, নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি নিষেধ করলে সঙ্গে সঙ্গে আমি নির্বাচন থেকে সরে যাব। যুবলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি প্রসঙ্গে পবন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এটা আমাদের সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি জানেন।
যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে নৌকা নিয়ে লড়ছেন বর্তমান সংসদ-সদস্য আফজাল হোসেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে থাকার কথা যুগান্তরকে জানালেও যুবলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সুব্রত পাল। যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়ছেন নীলফামারী-৩ আসনে। এ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক এমপি গোলাম মোস্তফা।
যুবলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সাদ্দাম হোসেন পাভেলকে দেওয়া হয়েছে নীলফামারী জেলার নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করার দায়িত্ব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন পাভেল যুগান্তরকে বলেন, ২৫ নভেম্বর নেত্রী আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের অনুমতি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের বিউটি’। ফলে আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। যুবলীগের কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তো আমি করিনি। এটা করেছেন আমার নেতারা।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক আহতাসামুল হাসান ভুইয়া রুমি কুমিল্লা-৫ আসনে স্বতন্ত্র হয়ে ভোট করছেন। এ আসনে নৌকা পেয়েছেন আবুল হাসেম খান। যুবলীগের গঠিত জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আহতাসামুল হাসান ভুঁইয়া রুমিকে কুমিল্লা জেলার দায়িত্বে রাখা হয়েছে।