হার্টের রিং সরবরাহ বন্ধের হুমকি ব্যবসায়ীদের
জাহিদ হাসান
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মূল্য নির্ধারণে মার্কআপ ফর্মুলা তথা জাতীয় নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি এমন অজুহাতে ইউরোপের দেশগুলো থেকে আমদানি করা ২৪টি কোম্পানির হার্টের স্টেন্ট (রিং) বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। পুনরায় মূল্য সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত আজ থেকে এটি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে তারা। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ছাড়াও নিয়মিত হৃদরোগের অস্ত্রোপচার হয় এমন হাসপাতালেও চিঠি ও ই-মেইলের মাধ্যমে বিষয়টি আজ জানিয়ে দেবেন বলছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে জীবনরক্ষাকারী এসব চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট হলে অসংখ্য মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন হৃদরোগী, অভিভাবক ও চিকিৎসকরা। সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের হার্টের রিং আমদানিকারক কয়েকজন ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সব কোম্পানির হার্টের রিংয়ের মূল্য সমন্বয় হওয়া উচিত। কিন্তু ইউরোপিয়ান দেশগুলো থেকে আমদানি করা রিংয়ের দাম আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যে দামে সরঞ্জাম কিনেছি, অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া দামে এটি বিক্রি করলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। কারণ ডলারের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা রিংয়ের ক্ষেত্রে তা আরোপ করা হচ্ছে না। মূলত কিছু ব্যবসায়ীকে সুযোগ করে দিতেই এমনটা করা হচ্ছে। তবে সরবারহ বন্ধ নয়, ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগের মূল্যে আর বিক্রি করা সম্ভব হবে না। সরকার থেকে পুনঃসিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এমনটা করা হবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের একেক হাসপাতালে হার্টের রিংয়ের দাম ছিল একেকরকম। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল দাম সমন্বয়ে জাতীয় নীতিমালা বা মার্কআপ ফর্মুলা তৈরি করা হয়। সেই সময় ১৭ সদস্যের কমিটি করে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ওই কমিটি ২৮ ধরনের রিংয়ের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এই নির্ধারিত দামেই দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের রোগীর কাছে রিং বিক্রি করে আসছিল ব্যবসায়ীরা। তবে কয়েক দফায় ডলারের দাম বাড়ায় ঔষধ প্রশাসন নতুন করে রিংয়ের দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়। চলতি বছরের জুন ও আগস্টে দুই দফায় মার্কআপ ফর্মুলা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাবোট ল্যাবরেটরিজ, বোস্টন সায়েন্টিফিক, মেডট্রোনিক কোম্পানির রিংয়ে মূল্য সমন্বয় করা হয়। তবে ১৩ ডিসেম্বর ২৪টি ইউরোপিয়ান কোম্পানির হার্টের রিংয়ের দাম মার্কআপ ফর্মুলা না করে কিছু চিকিৎসক ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাদের ইচ্ছামতো নির্ধারণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরসংশ্লিষ্টরা যুগান্তরকে জানায়, দেশের কয়েকটি হাসপাতালে ১৮ হাজার টাকার হার্টের রিং দেড় লাখ থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে আসছিল ব্যবসায়ীরা। কিছু অসাধু চিকিৎসকের কমিশন বাণিজ্যের কারণেই রোগীদের কাছ থেকে এ বাড়তি মূল্য নেওয়া হতো। ফলে রিংয়ের মূল দামের চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি অর্থ গুনছিল গ্রাহক। এমন বাস্তবতায় ১২ ডিসেম্বর হার্টের রিংয়ের দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
ইউরোপের কোম্পানির দাম কমানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, মেডিকেল ডিভাইস বিক্রির গাইডলাইন ২০১৭ সালে তৈরি হয়। গাইডলাইনে বিদেশ থেকে মেডিকেল সরঞ্জাম আমদানি করার একটি ফর্মুলা তৈরি করে সরকার। সেই ফর্মুলার ব্যাপারে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, মার্কআপ ফর্মুলা অনুযায়ী নতুন করে দাম নির্ধারণ করায় অনেক আমদানিকারক (ইউরোপীয় দেশ থেকে) কোম্পানিই বিক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা আমাদের আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আমরা না করে দিয়েছি। কারণ আমরা মানুষকে জিম্মি করার পক্ষে নই। আমরা কোনো ধর্মঘটে নেই।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র উপপরিচালক মো. নূরুল আলম যুগান্তরকে বলেন, কার্ডিয়াক ডিভাইসের মূল্য ও আনুষঙ্গিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি একাধিক প্রতিষ্ঠানের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এরপর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে মূল্য নির্ধারণ করে। তিনি বলেন, এমনিতেই ব্যবসায়ীরা ৪৫ শতাংশ বেশি দামে এসব জীবনরক্ষাকরী সরঞ্জাম বিক্রি করে আসছিল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে ঔষধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ী সমিতি উপস্থিত থেকে কাগজপত্রে স্বাক্ষরও করেছে। এরপরও যদি না মানে তাহলে পরবর্তীকালে তাদের সঙ্গে বসে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তবে সবার আগে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে প্রাধান্য দিতে হবে।