বছরের শুরুতে নতুন পাঠ্যক্রমের বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা
অষ্টম নবমের ৬ বইয়ের পাণ্ডুলিপিই হয়নি
বাকি আর এক মাস। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ছাপা এখনো শেষ হয়নি
হুমায়ুন কবির
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পাঠদান শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমে। এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ কোটির বেশি বই ছাপাতে হবে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে সময় বাকি মাত্র এক মাস। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিজ্ঞানের অনুসন্ধানী ও অনুশীলন এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের মোট ৬টি বইয়ের পাণ্ডুলিপিই হাতে পায়নি এনটিসিবি। অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের কয়েকটি বই ছাপানোর কাজ শুরু হলেও নবম শ্রেণির প্রায় ৯৫ ভাগ বই মুদ্রণের কাজ শুরুই হয়নি। এছাড়া নবম শ্রেণির বইয়ের ফর্মা অনেক বড়। মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির মোট বইয়ের প্রায় সমান নবম শ্রেণির বই। তাই এই বই ছাপানো অনেক সময়ের ব্যাপার। এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপাতে হবে প্রায় ৩১ কোটি পাঠ্যবই। এখনো পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়ের মুদ্রণ চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ফলে মাধ্যমিক স্তরের ১০ কোটির বেশি বই এখনো ছাপার কাজই শুরু হয়নি।
এদিকে প্রাথমিকের মোট বইয়ের ১০ শতাংশ বই ছাপার কাজ বাকি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে ১২ কোটির মতো বই ছাপানো বাকি রয়েছে। ফলে নতুন বছরের শুরুতে নবম শ্রেণিসহ বেশ কয়েকটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যদিও এনসিটিবি বলছে, ৭ম থেকে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটিও ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিজ্ঞানের দুটি করে বই ছাপানো বাকি। সেজন্য সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই সব বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। পহেলা জানুয়ারি সব শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। আর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকবে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপার কাজ করছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬টি। আর প্রাথমিক স্তরের মোট বই প্রায় ৯ কোটি ৭৫ লাখ। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হবে।
এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে।
মুদ্রণ সমিতির সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলামের ২য় ও ৩য় শ্রেণির প্রায় দেড় কোটি বই ছাপানো বাকি রয়েছে। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাণ্ডুলিপি এখনো মুদ্রণে যায়নি। অষ্টম শ্রেণির ১৪টি বইয়ের মধ্যে ১১টি ডামি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সপ্তম ও অষ্টম এবং নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানসহ ৭টি বইয়ের মোট ৪ কোটি বই ছাপানোর অনুমোদন হয়নি। এছাড়া নবম শ্রেণির ৯৫ ভাগ বই এখনো মুদ্রণে যায়নি। অষ্টম ও নবম মিলে সাড়ে ৫ কোটি বই এখনো ছাপানো বাকি রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১১ কোটি বই ছাপানো বাকি। যা মোট বইয়ের ৪০ শতাংশ।
এনসিটিবির আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গত শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের বই ছাপানো নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সেজন্য এবার প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ আগে শুরু হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক মিলে এবার প্রায় সাড়ে ৯ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। যার মধ্যে অধিকাংশ ছাপানোর কাজ শেষ। অবশিষ্ট কিছু বই ছাপা শেষ করে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হবে।
ওই সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ আগে শুরু করায় মাধ্যমিকের বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাপানোর পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে নবম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে নতুন শিক্ষাক্রম হওয়ায় সাবধানতার সঙ্গে বই ছাপানো হচ্ছে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটি দফায় দফায় সংশোধন করা হয়েছে। এজন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে একটু বেশি সময় লেগেছে।
ছাপাখানার মালিক ও কর্মীরা জানান, বই ছাপার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ৫০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে চুক্তি করে এনসিটিবি। অথচ এ বছরের (২০২৩) বাকি আছে মাত্র এক মাস। এ সময়ের মধ্যে কোনো ছাপাখানাই এত বই ছাপিয়ে শেষ করতে পারবে না।
টেন্ডার, কাজের চুক্তি, বিল পরিশোধ যথাসময়ে না করায় বই ছাপা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে এনসিটিবি।
বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নতুন বছরের শুরুতে মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বই পাবে না। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে তারা বই পাবে। কারণ এই বছর নতুন শিক্ষাক্রম বইয়ের সফট কপি ও ডামি তৈরি করতে দেরি হয়ে গেছে। এছাড়া কাগজ সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে যথাসময়ে বই পৌঁছাতে পারবে না কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের বই ছাপানো শুরু হয়েছে। ৭ম, ৮ম ও নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক এবং বিজ্ঞান বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো আমরা হাতে পাইনি। তবে সামনে যে কদিন সময় আছে এর মধ্যে সব বই ছাপানো শেষ হয়ে যাবে। কাজেই বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে যে শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে সেটি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।