ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী ২ লাখ ছাড়াল
জাহিদ হাসান
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৭৫৯ রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় ১৮৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৭৫ জন ভর্তি হয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৩৪ জনে। ঢাকায় এ সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার ৮৬২ জন। ফলে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৯৬ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গেল ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে আরও ১২ জনের, যা নিয়ে মোট প্রাণহানি হয়েছে ১ হাজার ৫৯৫ জনের। এদের মধ্যে ৯২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। বাকি ৬৭০ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বিস্তারের মধ্যে এবার ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়াল। যা ঢাকা নগরীতে ভর্তি রোগীর প্রায় দ্বিগুণ। দেশে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কখনও এত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হননি।
এবার মশাবাহিত এ রোগ সব জেলায় ছড়িয়ে পড়ায় মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। রাজধানীর বাইরে রোগী বেড়ে যাওয়ায় সামনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১০ জুলাই ঢাকার বাইরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রথম ১ হাজার ছাড়ায়। ১৪ আগস্ট মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যায় ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায় বাইরের জেলাগুলো। তার আগের দিন পর্যন্ত সারা দেশে ৮৭ হাজার ৮৯১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, যার মধ্যে ঢাকায় ৪৩ হাজার ৬৬৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৩ হাজার ২২৬ জন ছিলেন।
২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার বাইরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়ায় এবং দেড় লাখ ছাড়ায় ১৭ অক্টোবর। ৩৯ দিনের মাথায় ঢাকার বাইরে আরও ৫০ হাজার রোগী ভর্তি হন।
শনিবার এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক বৈঠকে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে এডিস অ্যালবোপিকটাস মশা। শহরে ডেঙ্গু ছড়ানো এডিস ইজিপ্টি মশা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে অ্যালবোপিকটাস নিয়ে কেউ ভাবছে না। এ মশার লার্ভা ধান গাছ, কলাগাছের পাতা, গাছের কোটর এমনকি কচুগাছের পাতায়ও হয়।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক সচেতনতামূলক কাজ হলেও গ্রাম পর্যায়ে হচ্ছে না। ডেঙ্গু এভাবে বাড়তে থাকলে গ্রাম পর্যায়ে কী হবে তা চিন্তার বিষয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা নগরীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৫৬ হাজার ৮২ জন রোগী। এ বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ১৮০ জনের। ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ হাজার ৮৫৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগে; এ সংখ্যা ৪২ হাজার ৪৪০ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১৬ জনের।
এছাড়া খুলনা বিভাগে ৩২ হাজার ২৬৯ জন ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু ১১৪ জনের। রাজশাহী বিভাগে ১৮ হাজার ২২৪ জন ভর্তির মধ্যে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৩৬২ জন। এ বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বরিশাল বিভাগে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩৬ হাজার ৬৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এরমধ্যে ১৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ৩ হাজার ৯২৪ জন ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে ১০৪৬ জন ঢাকায় এবং ২ হাজার ৮৭৮ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে। মাসের হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মে-তে এক হাজার ৩৬, জুনে ৫ হাজার ৯৫৬, জুলাইয়ে ৪৩ হাজার ৮৭৬, আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬, সেপ্টেম্বরে ৭৯ হাজার ৫৯৮ এবং অক্টোবরে ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন। নভেম্বরের ২৫ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৬ হাজার ২১ রোগী।
মাসওয়ারি মৃত্যুর হিসাবে জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ২, মে-তে ২ জন, জুনে ৩৪, জুলাইয়ে ২০৪, আগস্টে ৩৪২, সেপ্টেম্বরে ৩৯৬ এবং অক্টোবরে ৩৫৯ জনের মৃত্যু হয়। নভেম্বরের প্রথম ২৫ দিনে মৃত্যু হয়েছে ২৪৭ জনের।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের নির্ধারিত মৌসুমের আগেই এবার এডিস মশার প্রদুর্ভাব দেখা দেয়। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অসময়ের বৃষ্টিপাত মশার প্রজণনকাল দীর্ঘায়িত করছে। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। রোগটি হতে মুক্তি পেতে এডিসের লার্ভা ধ্বংসে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে হবে।