অসুস্থ নেতার কাছেও ডিবি পরিচয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ টাকা, অভিযোগ রিজভীর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অসুস্থ নেতার কাছ থেকেও ডিবি পরিচয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ টাকা-এমন অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ১০-১২ জনের একটি টিম বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও শরীয়তপুর জেলা সাবেক সভাপতি জামাল শরীফ হিরুর কলাবাগানের বাসায় যায়।
তাকে নিয়ে যাবেন। এমন পরিস্থিতিতে হিরুর সহধর্মিণী শামীমা আখতার সাথী কান্নাকাটি করেন। স্বামীর কিডনি ডায়ালাইসিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতার কথা জানান। বিভিন্ন সময়ে করানো চিকিৎসাপত্র দেখান। সব চিকিৎসাপত্র দেখে ডিবি পরিচয়ে পুলিশ সাথীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে।
তাৎক্ষণিক এত টাকা কোথায় পাবেন বলে তা দিতে অপারগতা জানালে ডিবির সদস্যরা বলেন, তাহলে গহনা (স্বর্ণালংকার) দিয়ে দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে অসুস্থ স্বামীর গ্রেফতার এড়াতে নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে ধার করে ডিবি পুলিশকে এক লাখ টাকা দেন। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশ বাসার সব সিসি ক্যামেরা, ফুটেজ ও মনিটর খুলে নেয়। শুধু তা-ই নয়। তাদের শিখিয়ে দেওয়া বক্তব্য দিয়ে সাথীর ভিডিও করে নেয়।
এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার বিকালে এসব অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী। এ সময় হিরুর স্ত্রীর লেখা একটি চিরকুট পড়ে শোনান তিনি। সেখানে আরও বলা হয়, তাদের শেখানো বক্তব্যে ছিল-মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশ বাসায় এসেছিল আমার স্বামী জামাল শরীফ হিরুকে আটক করতে। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে মানবিক কারণে পুলিশ তাকে নেয়নি। এ ব্যাপারে আমার বা আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি বা অভিযোগ নেই।
রিজভী বলেন, এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে যদি এমন আচরণ হয়, তাহলে সারা দেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কী চলছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন গ্রেফতার বাণিজ্য অহরহ ঘটছে। এ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, এটা করলে কিছুই হবে না, তারা সরকারের পক্ষেই কাজ করছেন। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডের কোনো দল নই।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) ফারুক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ডিবি কোথাও গেলে লোকাল থানাকে জানিয়ে যায়। ডিবি পরিচয় দিয়ে অন্য কেউ করতে পারে। তারা যদি সিসিটিভির ফুটেজ বা গোপন ক্যামেরায় মোবাইলে ছবি তুলে থাকেন এবং তা দেন, আমরা যাচাই করে দেখব সেখানে আমাদের কোনো সদস্য আছে কি না। থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী আরও অভিযোগ করেন, ডিবি অফিসে নিয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের আঙুল তুলে দেওয়া হচ্ছে। এত জুলুম, নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করেও বিজয়রথ একদিন লক্ষ্যস্থলে পৌঁছবেই। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। তাদের লোকজন ধরাও পড়ছে। কিন্তু তাদের ছেড়ে দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরে দোষী প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হওয়া এখন নাগরিক দায়িত্ব। তাই মানুষ শামিল হয়েছে। এ দেশের অতীত ইতিহাসে দেখা গেছে, জুলুমকারী ও অন্যায়কারী বেশি দিন থাকতে পারে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে ধারাবাহিক অবরোধ কর্মসূচি সফল করছেন।
নেতাকর্মীরা রাস্তায় আছেন, দাঁড়াচ্ছেন। একদিকে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যদিকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তারা রাজপথে নেমেছেন। তারা কোনো ভোগবিলাস, কোনো অর্থকড়ির জন্য এ কর্মসূচি পালন করছেন না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়ছেন।