Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বছরের শুরুতে নতুন বই দেওয়া নিয়ে শঙ্কা

১৫ কোটির বেশি বই ছাপানো শুরুই হয়নি

প্রাথমিকের ৩ কোটি ও মাধ্যমিকের ১২ কোটি * বইয়ের গুণগত মান নিয়ে শঙ্কা

Icon

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

১৫ কোটির বেশি বই ছাপানো শুরুই হয়নি

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি দেড় মাসের মতো। এবার শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপাতে হবে প্রায় ৩১ কোটি পাঠ্যবই। কিন্তু এখনো সব শ্রেণির বইয়ের মুদ্রণচুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আগামী শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান। এসব বই এখনো মুদ্রণে যায়নি। ফলে মাধ্যমিক স্তরের ১২ কোটির বেশি বই ছাপার কাজই শুরু হয়নি। এদিকে প্রাথমিকের প্রায় ৩ কোটির বই ছাপার কাজ বাকি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে ১৫ কোটির বেশি বই ছাপানো বাকি রয়েছে। ফলে বছর শুরুতে বেশ কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি। ইতোমধ্যে নবম শ্রেণির বইয়ের পারসেজ অর্ডার (ক্রয়াদেশ) হয়ে গেছে। এর মধ্যে সব বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নবম শ্রেণির বই উপজেলায় পাঠানো হবে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি সব শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। আর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকবে।

শিক্ষার্থীদের হাতে নিম্নমানের কাগজ ও অনুজ্জ্বল বই বিতরণের অভিযোগে চলতি শিক্ষাবর্ষে ব্যাপক সমালোচনায় ছিল এনসিটিবি। অনেক শিক্ষার্থীর হাতেই বই পৌঁছেছে তিন থেকে চার মাস পরে। এরই মধ্যে আগামী বছরের বইয়ের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে আগামী শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক, ইবতেদায়ি ও মাধ্যমিক স্তরের ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ছাপা হবে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬টি। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্য ছাপানো হবে ১০ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বই। আর প্রাথমিক স্তরের মোট বই প্রায় ৯ কোটি ৫০ লাখ। এছাড়া ইবতেদায়ির জন্য ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৫টি বই ছাপা হবে। গত বছর প্রায় ৩৩ কোটি বই ছাপানো হয়েছে। নতুন কারিকুলামের কারণে একজন শিক্ষার্থী ১০টি করে বই পাবে। এর ফলে গতবারের চেয়ে এবার ২ কোটির বেশি বই কম ছাপানো হচ্ছে।

মুদ্রণ সমিতির সূত্রে জানা যায়, ২য় ও ৩য় শ্রেণির বইয়ে সংশোধনী থাকায় দেরিতে ছাপা শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রথম ও ৫ম শ্রেণির ৮০ শতাংশ বই ছাপা শেষ হয়েছে। এতে প্রাথমিকের ৩ কোটির বেশি বই এখনো ছাপা বাকি রয়েছে। এছাড়া ৯ম শ্রেণির বইয়ের ওয়ার্ক অর্ডার হয়নি। এটির ছাপা শুরু হতেও সময় লাগবে। ষষ্ঠ আর সপ্তম শ্রেণির মোট বইয়ের অর্ধেক ছাপানো হয়েছে। এছাড়া অষ্টম শ্রেণির বইও ছাপা শুরু হয়নি। সব মিলিয়ে মাধ্যমিকে ১২ থেকে ১৪ কোটি বই এখনো ছাপা বাকি রয়েছে।

এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন কারিকুলামের নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু করা যায়নি। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বইটিও ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। সেজন্য সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব বই ছাপার কাজ শেষ হবে।

এনসিটিবির সূত্র জানায়, গত শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের বই ছাপানো নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সেজন্য এবার প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ আগে শুরু হয়েছে। তাই প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ আগে শুরু করায় মাধ্যমিকের বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটি দফায় দফায় সংশোধন করা হয়েছে। এজন্য একটু বেশি সময় লেগেছে। নতুন শিক্ষাক্রম হওয়ায় সাবধানতার সঙ্গে বই ছাপানো হচ্ছে। নবম শ্রেণির বই ৫০ দিনের মধ্যে ছাপানোর বাধ্যবাধকতা দেওয়া হলেও হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণে বই ছাপানো শেষ করা যায়নি।

বাংলাদেশ মুদ্রণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পাঠ্যবই ছাপানো ও যথাসময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর পুরো দায়িত্ব এনসিটিবির। নতুন বছর শুরু হতে বেশি সময় নেই। মাত্র ৪৫ শতাংশ বই ডেলিভারি হয়েছে। বাকি ৫৫ শতাংশ বই দেড় মাসের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে নবম ও অষ্টম শ্রেণির বই, যা এখনো ছাপানো শুরু হয়নি। এতে মোট বইয়ের ১৫ কোটির বেশি এখনো ছাপা বাকি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবার যে দরে কাজ দেওয়া হয়েছে, তাতে ভালো মানের বই-ই দিতে পারবে না। কাগজের মান খারাপ হবে স্বাভাবিক। যদি এনসিটিবি নিম্নদরের দরপত্র বাতিল করে ন্যায্যমূল্যে কাজ দিত, তাহলে হয়তো এমন অবস্থা তৈরি হতো না।

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বিশেষ করে অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের বই লিখতে একটু দেরি হয়ে গেছে। তাই পৃষ্ঠার সংখ্যা নির্ধারণ করতে না পারায় টেন্ডার করতে একটু দেরি হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অষ্টম শ্রেণির বই ছাপা শুরু হয়ে গেছে। নবম শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার হয়ে গেছে। বড় বড় গ্রুপ এ বইয়ের কাজ পেয়েছে। কাজেই বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে যে শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে, সেটি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কাগজের মান নিয়ে তিনি বলেন, ভালো মানের কাগজে বই ছাপানো হবে। নতুন কারিকুলামের কারণে দেরিতে সমাজবিজ্ঞানের পাণ্ডুলিপি হাতে পেয়েছি। প্রেসে চলে গেছে। দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যাবে। নবম শ্রেণির বই নিয়ে একটু শঙ্কা আছে। কারণ বইটি লিখতে দেরি হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম