সেই বিচারককে নিয়ে একদিনে তিন আদেশ
সকালে কারাদণ্ড দুপুরে জামিন বিকালে রায় স্থগিত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আদালত অবমাননায় কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া ৩০ দিনের কারাদণ্ড ও জরিমানার রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
সোহেল রানার এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে সাজা স্থগিত করে এ আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত এ সাজা স্থগিত থাকবে। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালত অবমাননার দায়ে সোহেল রানাকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। কিন্তু ৩ ঘণ্টা পর দুপুরে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ তাকে জামিন দেন।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক আদালত প্রাঙ্গণে কিছুটা চাঞ্চল্য তৈরি হলেও আইনের দিক থেকে এখানে কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। সোহেল রানার আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক যুগান্তর জানান, হাইকোর্টের দেওয়া ৩০ দিনের কারাদণ্ড ও জরিমানার রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি।
২০ নভেম্বর পর্যন্ত এ সাজা স্থগিত থাকবে। এত দ্রুত তিনটি আদেশের বিষয়ে আইনের দিক থেকে কোনো ব্যত্যয় হয়নি। এর আগে দুপুরে তিনি বলেছিলেন, হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন। এজন্য জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। ৩০ দিনের জন্য জামিন দেন হাইকোর্ট। ফলে সোহেল রানাকে আর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে না।
আদালত অবমাননার দায়ে বেলা সোয়া ১১টার পর সোহেল রানাকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি তাকে ৭ দিনের মধ্যে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এক মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করেছিলেন সোহেল রানা। ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে সোহেল রানার প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট এই রায় দেন।
রায়ের পর আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায় বলেছিলেন, সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু তার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে তাকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। আর জরিমানার পাঁচ হাজার টাকা তাকে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর জমা দিতে বলা হয়েছে। সোহেল রানা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসাবে সংযুক্ত আছেন বলে জানান তিনি।
যে মামলা সূত্রে আদালত অবমাননা : আইনজীবীদের তথ্যমতে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন।
একই সঙ্গে মামলাটির কার্যক্রম ৪ মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ২০১৯ সালের ৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা ১০ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। এ সময় আদালতে মামুন উপস্থিত ছিলেন। রিয়া অনুপস্থিত থাকায় তাকে পলাতক ঘোষণা করেন আদালত।
এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সোহেল রানাকে হাজির হতে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন মামুন। ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে সোহেল রানাকে তলব করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ২১ আগস্ট তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তিনি হাইকোর্টে হাজির হন।
পরবর্তী সময়ে জবাব দাখিল করেন। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালত অবমাননার রুলের পর ৩১ আগস্ট সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করেন। হাইকোর্টের ধার্য তারিখে সোহেল রানা সময়ের আরজি জানান। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ রাখেন।
আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে তার ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার কারাদণ্ডের রায় দেন।