Logo
Logo
×

শেষ পাতা

১৬ বছরেও চালু হয়নি এশিয়াটিক কটন মিল

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

১৬ বছরেও চালু হয়নি এশিয়াটিক কটন মিল

চট্টগ্রাম নগরীর আতুরার ডিপোর ‘দি এশিয়াটিক কটন মিল’ পুনঃঅধিগ্রহণের ১৬ বছরেও চালু করতে পারেনি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ টেক্সটাইল মিলের সরঞ্জামসহ মূল্যবান সম্পদ। এদিকে এ মিলের প্রায় ১২শ শ্রমিকের বকেয়া পাওনা ঝুলে আছে বছরের পর বছর। যার পরিমাণ প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। বারবার মালিকানা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় এ পাওনা এখনো তারা বুঝে পাননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৯ সালে ব্যক্তিমালিকানায় এশিয়াটিক কটন মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির এক আদেশমূলে মিলটি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৮২ সালে শেয়ার হোল্ডার ও মালিকদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিমূলে মিলটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১৯৯৩ সালে মিলটি লে-অফ ঘোষণা করে। এরপর থেকে আইনগত জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে মিলটি বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন মালিক পক্ষ ২০০০ সালে দায়-দেনাসহ মিল হস্তান্তর করে নতুন মালিকের কাছে। নতুন মালিক দায়িত্ব নিয়ে দেনা পরিশোধ ও মিল চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিছু বকেয়া পাওনা শ্রমিকদের পরিশোধও করা হয়। নতুন যন্ত্রপাতি এনে মিলের একাংশ চালুর উদ্যোগও নেওয়া হয়। এরপর পূবালী ব্যাংকের সঙ্গে দায়-দেনা সংক্রান্ত বিরোধ দেখা দিলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। সেই মামলার জেরে নতুন মালিক মিলটি আর চালু করতে পারেননি।

এদিকে চুক্তি ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে ২০০৮ সালে মিলটি পুনঃঅধিগ্রহণ করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে ফেরত নেওয়া হয়। এরপর থেকে মিলটি বিটিএমসির দায়িত্বে রয়েছে। যদিও পুনঃঅধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বৈধভাবে হয়নি বলে মনে করেন মিলের মালিক পক্ষ।

দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক কর্মচারীরা বেতন-ভাতা না পেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ শ্রমিক মারা গেছেন। এখনো প্রায় ১২শ শ্রমিকের ৩৩ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ অবস্থায় পাওনা আদায়ে আন্দোলন শুরুর হুমকি দিয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, বিটিএমসি মিলটি চালু না করে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে গুদাম ও খালি জায়গা ভাড়া দিয়ে রেখেছে। মিল চালুর চেয়ে গুদাম ভাড়ার আয়ের দিকেই এখন তাদের আগ্রহ বেশি। এশিয়াটিক কটন মিল শ্রমিক লীগের সভাপতি যদু মোহন দাশ যুগান্তরকে জানান, মিলটি সরকার পুনঃঅধিগ্রহণ করার পর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব শ্রম আইন অনুযায়ী পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং বিটিএমসি’র ওপর বর্তায়। কিন্তু তারা আমাদের পাওনা পরিশোধ করছে না। তারা মিলও চালু করতে পারছে না। শ্রমিকরা গত ৩০ বছর ধরে বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। অনেক শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। বাকিরা অতি কষ্টে কোনোমতে দিনাতিপাত করছেন। শ্রমিকদের বকেয়া ৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না। অথচ বিটিএমসি মিলকে গোডাউন হিসাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে।

তিনি বলেন, এশিয়াটিক দেশের সবচেয়ে বড় কটন মিল ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। একটি মিলের উৎপাদনের লাভ দিয়ে পর্যায়ক্রমে এই মিলের ভিতরে আরও তিনটি মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। মিলটি পুনরায় চালু হলে তা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শিগগিরই শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মানববন্ধনসহ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।

বর্তমানে এশিয়াটিক কটন মিলের ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা আমিন জুট মিলের জেনারেল ম্যানেজার মো. বিল্লাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘বিটিএমসি অনেক মিলই চালু করতে পারছে না। এশিয়াটিক কটন মিলে বিটিএমসির যেসব মেশিন আছে তা অকেজো হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। মিল চালু করার অনুকূল কোনো পরিস্থিতিই নেই এখন। তাছাড়া ১২শ শ্রমিক-কর্মচারীর বহু টাকা বাকি রয়েছে। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী যা প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। এসব টাকা কে পরিশোধ করবে, তা নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া সর্বশেষ যারা মালিক ছিলেন তারা মামলা করেছেন। তাদের দাবি যে প্রক্রিয়ায় মিল পুনঃঅধিগ্রহণ করা হয়েছে, তা বৈধ ছিল না।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম