শাহবাগে এডিসি হারুনকাণ্ড
থানায় নির্যাতনের পূর্বাপর বর্ণনা করলেন ৪০ জন
মাহমুদুল হাসান নয়ন
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শাহবাগ থানায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে পুলিশ। প্রতিবেদনে শাহবাগ থানায় এডিসি হারুন-অর-রশীদ কর্তৃক নির্যাতনের পুরো চিত্র উঠে এসেছে। এতে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ঘটনার সূত্রপাত নিয়েও বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে থানায় নির্মমতার পূর্বাপর তুলে ধরে বক্তব্য দেন ৪০-৪২ জন। ঘটনায় সম্পৃক্তদের সাক্ষ্যগ্রহণের পাশাপাশি ঘটনার পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোও প্রতিবেদনে তুলে এনেছে তদন্ত কমিটি। আজ ডিএমপি কমিশনরের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এদিকে তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক খান মামুন। রোববার দেওয়া বক্তব্যে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। জানান, ওইদিনের ঘটনায় তিনিও ভিকটিম। তিনি কারও ওপর হামলা করেননি। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে তার স্ত্রী এডিসি সানজিদা আফরিনের সঙ্গে এডিসি হারুনের অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। বর্ণনা দেন থানায় এডিসি হারুনের নির্মম নির্যাতনের। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তার বক্তব্য রেকর্ডের আগে এডিসি হারুন ও সানজিদারও বক্তব্য গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি। তারা পুরো ঘটনার সূত্রপাতের দায় চাপান এপিএস মামুনের ওপর।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) একেএম হাফিজ আক্তার সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, কমিটি ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। কমিশনার সেটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠাবেন। ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হলে নিয়ম হলো-সদর দপ্তর থেকে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠায়।
৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে রমনা জোনের তৎকালীন এডিসি হারুন-অর-রশীদসহ ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতদের অভিযোগ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে এপিএস মামুনের স্ত্রী সানজিদার সঙ্গে হারুনকে দেখে ফেলায় তাদের ওপর এ নির্যাতন নেমে আসে। থানা হেফাজতে নিয়ে পিটিয়ে তাদের রক্তাক্ত করা হয়। এ ঘটনার পরদিন যুগান্তরের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পরে আরও পাঁচ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয় কমিটিকে। কমিটি আজ প্রতিবেদন জমা দেবে। এ ঘটনায় এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এদিকে তদন্ত কমিটি হারুন-সানজিদার পাশাপাশি পুলিশ পরিদর্শক মো. গোলাম মোস্তফাসহ ছাত্রলীগের ভুক্তভোগী নেতা এবং ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও থানার প্রত্যক্ষদর্শীদেরও সাক্ষ্য নিয়েছে। তাদের প্রায় সবার জবানিতে হারুনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এর পাশাপাশি পরিদর্শক মোস্তফার আগ্রাসী ভূমিকার বিষয়টিও এসেছে। যে ৪০-৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, ঘটনায় সম্পৃক্ততা নিরূপণে তাদের বক্তব্যও বিশ্লেষণ করে তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাহবাগ থানায় নির্যাতনের সময় যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের ভূমিকাও নিরূপণ করা হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষ থেকে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। তারা কারা, পুলিশের তদন্তে তা বের করা হয়েছে। কমিটি জানতে পেরেছে, উপস্থিত সব পুলিশ সদস্য ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করেছেন, বিষয়টি এমনও নয়। কেউ কেউ মেরেছেন। কেউ করেছেন গালগাল। নীরব ভূমিকায়ও ছিলেন কেউ কেউ। যাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে পেরেছে কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য নিয়ে যান এপিএস আজিজুল হক খান মামুন। এর আগে অন্যদের বক্তব্যও গ্রহণ করা হয়। সবার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে দাখিল করা হচ্ছে। এতে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেকের ভূমিকা তুলে ধরবে কমিটি। এরপর বিভাগীয় তদন্ত হবে। তদন্ত কমিটি দোষীদের বিষয়ে শাস্তির সুপারিশ করবে।’
এদিকে ১০ সেপ্টেম্বর এডিসি হারুনকে রমনা জোন থেকে প্রত্যাহার করে ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজম্যান্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়। আবার সেদিন রাতেই তাকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়। এ নিয়ে আপত্তি উঠলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। ছাত্রলীগ নেতারা এ নিয়েও আপত্তি তুললে সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। যদিও তিনি সোমবারও রংপুর রেঞ্জে যোগদান করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন যুগান্তরকে বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশীদ এখনো রংপুরে যোগদান করেননি।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের আদেশে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করতে হয়।’