ভেলুয়ার দিঘিতে জুয়ার আসর
১২ ভিআইপি পাশ দিয়ে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
এম এ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![১২ ভিআইপি পাশ দিয়ে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2023/09/02/image-713455-1693602239.jpg)
ফাইল ছবি
চট্টগ্রামে মাছ চাষের জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে লিজ নেওয়া ভেলুয়ার দিঘিতে শুক্রবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে বড়শি প্রতিযোগিতার নামে জুয়ার আসর। চলতি সপ্তাহেও এ প্রতিযোগিতার পাশ বিক্রি করা হয়েছে ৪০ হাজার টাকায়। আর প্রকাশ্যে এমন অনিয়ম চালু রাখতে প্রতি প্রতিযোগিতায় ১২টি ভিআইপি পাশ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। টাকার অঙ্কে এ পাশের মূল্য ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
রেলওয়ে ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কর্মকর্তাদের মাঝে বিতরণ করা হয় এসব পাশ। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে জুয়ার আসর পরিচালনা করতে কর্তৃপক্ষের জন্য ইজারাদারের ব্যয় হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাকি ১০০ পাশ বিক্রি করা হয় মোট ৪০ লাখ টাকায়। ভেলুয়ার দিঘির ইজারাদার আবদুল মান্নান খোকন নিজেই এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ১ নম্বর প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটনের ছোট ভাই।
ভেলুয়ার দিঘিতে শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি সপ্তাহের মতো এদিনও দিঘির পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে মাছ শিকার করছেন শিকারিরা। দুই পাড়ে নির্ধারিত ১১২টি আসনে অবস্থান ছিল তাদের। তবে গত ২৭ আগস্ট যুগান্তরে ‘চট্টগ্রাম রেলের ভেলুয়ার দিঘি, বড়শি প্রতিযোগিতার নামে চলছে জুয়ার আসর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর পোশাক পরা কোনো সিএমপি সদস্যকে দেখা যায়নি। যারা গেছেন, তারা ছিলেন সিভিল পোশাকে।
এদিন দিঘির ইজাদার কর্তৃপক্ষের কর্মচারীরাও ছিলেন বিশেষ নজরদারির কাজে। দিঘির উত্তর পাড়ে ছিলেন ইজারাদার আবদুল মান্নান খোকন। তার সঙ্গে ছিলেন সিএমপির কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবিরকে ধাক্কা মেরে আহত করার অভিযোগে খুলনা রেঞ্জে বদলি হওয়া এএসআই সন্তু শীল। এদিন প্রথম পুরস্কার জেতেন ১১ কেজি ওজনের কাতল পাওয়া শিকারি। দ্বিতীয় পুরস্কার ১০ কেজি ৫০০ গ্রাম, তৃতীয় পুরস্কার ১০ কেজি ৩০০ গ্রাম এবং সর্বশেষ পুরস্কার ৮ কেজি ওজনের মাছ ধরা প্রতিযোগী। সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয় এই প্রতিযোগিতা। অন্যান্য বারের মতো এবার প্রকাশ্যে পুরস্কার বিতরণ করতে দেখা যায়নি। ইজারাদারের অফিসে নিয়ে ১৫ জন বিজয়ীকে তাদের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইজারাদার খোকন যুগান্তরকে বলেন, বড়শি প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে কমপক্ষে ১২টি ভিআইপি পাশ দিতে হয়। প্রশাসন ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এতে অংশ নেন। রেলওয়ের ডিআরএম (বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক) এর জন্যও পাশ দেওয়া হয়। তা নাহলে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সম্ভব হতো না।
পূর্বাঞ্চলের ডিআরএম আবিদুর রহমান বলেন, বড়শি প্রতিযোগিতার কথা শুনেছি। তবে কখনো অংশ নিইনি। সেখানে যদি পুরস্কারের নামে নগদ লাখ লাখ টাকা দেওয়া হয়, তাহলে তো সেটি জুয়া। এভাবে করতে দেওয়া যাবে না।
সূত্র জানায়, এ দিঘিতে মাছ চাষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে খোকনকে লাইসেন্স দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর কর্তৃপক্ষের শর্তের তোয়াক্কা না করে দিঘির পাড়ে অফিস নির্মাণ, পাড়ের গাছপালা কাটা, রেলওয়ে স্টাফদের পানি ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা তৈরিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করেছেন তিনি। বাইরে থেকে মাছ এনে দিঘিতে ছাড়া হচ্ছে। তা দিয়ে প্রতি সপ্তাহে আয়োজন করা হচ্ছে বড়শি প্রতিযোগিতা। এ জুয়ার আসরে অংশ নিয়ে অনেকেই হচ্ছেন সর্বস্বান্ত।