Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রূপপুর প্রকল্প : ব্যয় মেটানো যাচ্ছে না ডলারে

বকেয়া পাওনা জমা হচ্ছে বিশেষ অ্যাকাউন্টে

জমাকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি ডলার, যা জাতীয় বাজেটের অংশ হিসাবে ধরা যাবে না

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বকেয়া পাওনা জমা হচ্ছে বিশেষ অ্যাকাউন্টে

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদেশি ব্যয় ডলারে পরিশোধ করা যাচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার পাওনা কিস্তি আটকে আছে। সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে পাওনা অর্থ জমা রাখা হচ্ছে এসকারো ব্যাংক হিসাবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়ায় অর্থ জমা অব্যাহত থাকবে। এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনেই করা হয়েছে। বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কয়েকজন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, রূপপুর প্রকল্পে রাশিয়ার পাওনা অর্থ আলাদা করে রাখায় বাজেটের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে না। যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তখন ওই তহবিল থেকেই রূপপুরের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হবে। এটি আইএমএফ-এর পরামর্শ হলেও আমাদের জন্য খারাপ কিছু না। তারা দাবি করেন, এই জটিলতার কারণে রূপপুর প্রকল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে না। তারা আরও জানান, এই অ্যাকাউন্টের অর্থ শুধু রূপপুরের জন্যই ব্যবহার করা যাবে।

ইআরডি সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়ার ঋণ ও সুদ হিসাবে দুই কিস্তির ৩০ কোটি ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জমা করা হয়েছে ওই অ্যাকাউন্টে। এসকারো অ্যাকাউন্ট বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ২২ মার্চ অর্থ বিভাগ থেকে ইআরডিকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারের সঙ্গে দুটি ঋণ চুক্তি হয়েছে। এর বিপরীতে চুক্তি অনুযায়ী কিস্তিভিত্তিক সুদ ও আসল পরিমাণ অর্থ সাময়িকভাবে জমা রাখার সুবিধার্থে এসকারো অ্যাকাউন্ট খোলার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় ঋণের সুদ ও আসল জমা করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা নীতি অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলো হলো কিস্তি পরিশোধের সময় উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ইআরডি বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখিতভাবে নির্ধারিত মার্কিন ডলার এসকারো অ্যাকাউন্টে রাখার নির্দেশনা দেবে। এমন নির্দেশনা পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এরপর ইআরডি, অর্থ বিভাগ এবং হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়কে অবহিত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসকারো অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত অর্থ ‘ঋণ পরিষেবা ব্যয়’ হিসাবে বিবেচিত হবে। স্থানান্তরিত এ অর্থ পরবর্তী সময়ে জাতীয় বাজেটের অংশ হিসাবে বিবেচিত হবে না। শুধু তাই নয়, এ অর্থ ব্যবহারেরও পদ্ধতি উল্লেখ করেছে অর্থ বিভাগ। সেটি হলো জমা করা অর্থ ব্যবহারের প্রয়োজন হলে ইআরডির কাছে নির্দেশনা চাইতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। নির্দেশনা পেলে এরপরই অর্থ ব্যয় করা যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহে এসকারো অ্যাকাউন্টের দৈনিক লেনদেন ও জমা করা অর্থের প্রতিবেদন অর্থ বিভাগ ও ইআরডিকে জানাবে।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, ঋণ পরিশোধের জটিলতা থাকলেও থেমে নেই রূপপুর প্রকল্পের কাজ। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬৫ হাজার ৮৩০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ২১ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সরকারের প্রথম ঋণচুক্তি হয় ২০১৩ সালে। সেটি ছিল ৫০ কোটি ডলারের। ওই টাকা দিয়ে প্রকল্পটির বিস্তারিত সমীক্ষাসহ প্রাথমিক কাজ করা হয়। সেই ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। এখন পর্যন্ত আট কিস্তিতে ৪০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালানোর পর থেকে কিস্তি পরিশোধ বন্ধ আছে। ১০ কোটি ডলার এখনো বকেয়া রয়েছে। এটি ২০২২ সালের মার্চেই পরিশোধের কথা ছিল। সেই সঙ্গে মূল প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করছে সরকার। এ অংশটির জন্য ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার কাছ থেকে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের চূড়ান্ত কিস্তি শুরু হবে ২০২৭ সাল থেকে। আগে নেওয়া ঋণের দুই কিস্তির আসল ও সুদ মিলে পাওনা রয়েছে ১০ কোটি ডলারের বেশি। মূল প্রকল্পে নেওয়া ঋণের সুদ প্রায় ১৮ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে বকেয়া প্রায় ৩০ কোটি ডলার, যা রাখা হয়েছে এসকারো অ্যাকাউন্টে।

সূত্র আরও জানায়, আগে মার্কিন ডলারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ করা হতো। এক্ষেত্রে রাশিয়ান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘জেএসসি এটমস্টয় এক্সপোর্ট’-এর নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘ভিইবি.আরএফ’ (রাশিয়ার একটি বৈদেশিক অর্থ লেনদেনবিষয়ক ব্যাংক)-এর মাধ্যমে লেনদেন করা হতো। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার কিছু ব্যাংকে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) বাদ দেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ পরিশোধে সমস্যা দেখা দেয় এবং বন্ধ হয়ে যায় লেনদেন। পরবর্তী সময়ে নানা প্রক্রিয়ায় কিস্তি পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো সফল হয়নি। ফলে জটিলতা আরও দীর্ঘ হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম