একান্ত সাক্ষাৎকারে এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি
উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2023/08/04/image-703136-1691115217.png)
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশ ও দেশের অর্থনীতি পিছিয়ে যাবে। যারা রাজনীতি করেন তারা নিশ্চয় দেশপ্রেমিক। জনকল্যাণেই তারা রাজনীতি করেন। এজন্য সামনে যে নির্বাচন নিশ্চয় তা সাংবিধানিকভাবে হতে হবে। আশা করব, রাজনীতিবিদরা এই বিষয়টিকে বিবেচনায় নেবেন। আমরা কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা কিংবা অরাজকতা দেখতে চাই না।
দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর ২০২৩-২৫ মেয়াদের জন্য নব-নির্বাচিত সভাপতি মাহবুবুল আলম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বর্তমানে রাজপথে বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছে সেটিকে তিনি সংকট মনে করেন না। তারা তাদের মতো রাজনীতি করবে। এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই।
সেটিকে তিনি রাজনৈতিক সংকট মানতে নারাজ। বরং তিনি মনে করেন, এ ধরনের কর্মসূচিতে দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে এবং এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ডলার সংকট এবং চট্টগ্রাম থেকে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা নির্বাচিত হওয়ার অনুভূতি প্রকাশসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গত ১৪-১৫ বছরে দেশে কোনো হরতাল-অবরোধ হয়নি। অস্থিতিশীলতা ছিল না। যে কারণে দেশ এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল এই উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। এখন আমাদের যাত্রা ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দিকে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানো আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমরা সেটাই আশা করি।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, দেশের আড়াই থেকে তিন কোটি ব্যবসায়ী ও স্টেকহোল্ডার, ৮০টি চেম্বার ও ৪৬১টি অ্যাসোসিয়েশন মিলে দেশের প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই। যার পরিচালনায় রয়েছেন ৭৮ জন পরিচালক। সাবেক তিন সভাপতি আমাকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়েছেন। আমি চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি হিসাবে পাঁচ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছি। এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছি। দায়িত্ব পালনকালে ব্যবসায়ী ও দেশের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। তিনি মনে করেন, কাজের স্বীকৃতি হিসাবেই তাকে এফবিসিসিআই সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এজন্য ৭৮ পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে প্রত্যাশা করেন, যে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা পালনে সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ডলার সংকট প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের সব দেশই অর্থনৈতিক ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব সারা বিশ্বে পড়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এটি বৈশ্বিক সংকট। ডলার সংকট থেকে উত্তরণে তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি ও অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, কেবল গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির জন্য বাজার খুঁজতে হবে। অপ্রচলিত পণ্য কিংবা বিকল্প রপ্তানি বাড়াতে হবে। তাছাড়া বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। বর্তমানে স্থিতিশীল যে পরিবেশ রয়েছে তা যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সহজীকরণে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। ব্যবসায়ীরাও এজন্য সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো গেলে বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। এ ছাড়া দেশেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এসব উদ্যোগ নেওয়া গেলে ডলার সংকট থেকে উত্তরণ ঘটানো যাবে। দেশের অর্থনৈতিক সুরক্ষা হবে।
গত বুধবার এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি হিসাবে মাহবুবুল আলমের নাম ঘোষণা করেন নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর চট্টগ্রাম থেকে তৃতীয় ব্যবসায়ী নেতা হিসাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এ কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। শীর্ষ এই সংগঠনে এর আগে সত্তরের দশকে সভাপতি হন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এ এ জহির উদ্দিন খান ও ’৯০-এর দশকে সভাপতি নির্বাচিত হন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। দুই নেতাই বর্তমানে প্রয়াত। মাহবুবুল আলম তৃতীয় ব্যক্তি, যিনি চট্টগ্রাম থেকে শীর্ষ এই সংগঠনের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হলেন।