রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেও প্রেস ক্লাব ছাড়বেন না শিক্ষকরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেও জাতীয় প্রেস ক্লাবে যথারীতি কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন শিক্ষকরা। তবে পুলিশের অনুরোধে আজ ও কাল তারা সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ৬০ জন রাখবেন। অন্যদিকে খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বুধবার তৃতীয়বারের মতো শিক্ষকদেরকে নিরাপত্তার কারণে হলেও কর্মসূচি থেকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া শিক্ষকদের ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিতে এদিন শিক্ষা বোর্ড থেকে কঠোর নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে। জবাবে শিক্ষকরা জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ মো. কাওছার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, নিরাপত্তার বিষয় সামনে রেখে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কর্মসূচি স্থগিত রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু তাদের দাবি আদায় হয়নি এবং লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলছে, তাই স্বল্প পরিসরে হলেও অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। ইতোমধ্যে ৬০ জনের নামের তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। কেননা, তিনি একের পর এক উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। পাশাপাশি তার বিভাগ হয়রানিমূলক সার্কুলার জারি করছে। সুতরাং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের বুধবারের মধ্যেই শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে বলেন। এ সময় তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নিয়ে কাজ শুরুর বিষয়টি উল্লেখ করেন।
গত ১১ জুলাই সারা দেশ থেকে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঢাকায় এসে আন্দোলনে যোগ দেন। বুধবার এই কর্মসূচির ১৬তম দিন পার হয়েছে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা জানান, প্রায় সব স্কুলে অঙ্গীকারনামার একটি ফরম বানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাতীয়করণ দাবিতে চলমান আন্দোলনে ক্লাস বয়কট করে শিক্ষক-কর্মচারীরা অংশ নেবেন। যতদিন আন্দোলন চলবে, কেউ ক্লাসে ঢুকবেন না। এতে সই করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। যাদের সাধ্য আছে, তারা ঢাকায় এসে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
যশোরের মণিরামপুরের সহকারী শিক্ষিকা রেবেকা খাতুন বলেন, ‘সাড়ে ১২ হাজার টাকায় ১৫ দিনও চলা যায় না। সেখানে এক মাস চলব কীভাবে? এ বেতনে চাকরি করছেন মাধ্যমিক শিক্ষকরা। এটা লজ্জার। এ বৈষম্য দূর না করা পর্যন্ত আমরা স্কুলে ফিরে যাব না। আমাদের সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীরাও আছে, অভিভাবকরাও আছেন। গভর্নিং বডির সদস্যদেরও সম্মতি আছে। শুধু শিক্ষামন্ত্রী আর মাউশি আমাদের সঙ্গে নেই। তাদের কারণেই জাতীয়করণ আটকে আছে।’
পটুয়াখালী জেলা বিটিএ’র সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, ‘বহু চেষ্টা করেও আন্দোলন দমানো যায়নি। আমাদের কেউ আর ফেরাতেও পারবেন না। যদি প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি পূরণের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দেন, তাহলে আমরা ঘরে ফিরে যাব।’
শিক্ষা বোর্ডের সার্কুলার : এদিকে শিক্ষকদের স্কুলে হাজির ও আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে দ্বিতীয়বারের মতো সার্কুলার জারি করা হয়েছে। বুধবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ জারি করেন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে কঠোর নজরদারি করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় অনুপস্থিত শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাপারে গর্ভনিং বডি ও প্রধান শিক্ষককে কঠোর হতে বলা হয়েছে।এরআগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে একই ধরনের নির্দেশনা জারি করা হয়।