সাদিক ও খোকনপন্থি শ্রমিকরা মুখোমুখি
বরিশালে দফায় দফায় সংঘর্ষ সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর
বাস টার্মিনাল দখল নিয়ে উত্তেজনা, আহত কয়েকজন * নবগঠিত শ্রমিক লীগের কমিটি নিয়েও অসন্তোষ
বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের দখল নিয়ে বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ও নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত অনুসারী শ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, সড়ক অবরোধ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সদ্যগঠিত মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটিতে পদ-পদবি না পাওয়া নিয়েও এ সময় গোলমাল হয় টার্মিনালে।
বৃহস্পতিবার রাতে বরিশালে মহানগর শ্রমিক লীগের নতুন কমিটি ঘোষিত হওয়ার চিঠি পান শ্রমিক লীগ নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র থেকে দেওয়া ওই চিঠিতে সভাপতি পদে পরিমল দাস এবং সাধারণ সম্পাদক পদে রইজ আহম্মেদ মান্না রয়েছেন। তারা দুজনেই বর্তমান মেয়র সাদিকের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। প্রাথমিকভাবে ঘোষিত ২৮ সদস্যের কমিটির অধিকাংশই সাদিকপন্থি। কমিটি ঘোষণার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই উত্তেজনা দেখা দেয় খোকন শিবিরে। মহানগর শ্রমিক লীগের সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন খোকন অনুসারী আফতাব হোসেন।
কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ এনে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন আফতাব হোসেন।
এদিকে সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব নিয়েও টার্মিনালে চলছিল উত্তেজনা। কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেনকে দুর্নীতির অভিযোগে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন খোকন অনুসারী শ্রমিকরা। ইউনিয়নের রাজনীতিতে ফরিদ সাদিক অনুসারী হিসাবে পরিচিত। এর প্রতিবাদে টার্মিনালে পালটা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন সাদিকের লোকজন।
সকাল ১০টায় প্রথমে বাস টার্মিনালসংলগ্ন ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন পদবঞ্চিত খোকন অনুসারী শ্রমিক লীগ নেতারা। এতে নেতৃত্ব দেন সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি আফতাব হোসেন। তিনি বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপেরও সভাপতি। অবরোধের কারণে বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে মহাসড়কে। ফলে আটকা পড়ে কয়েকশ বাস-গাড়ি। পুলিশ এসে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে আবার যান চলাচল শুরু হয়। অবরোধ তুলে নিয়ে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা টার্মিনালে আসেন। এরপর সংবাদ সম্মেলন করার উদ্দেশ্যে সেখানে আসেন সাদিক অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। লিটন মোল্লার নেতৃত্বে তারা টার্মিনালে প্রবশের পরপরই তাদের ওপর হামলা চালান খোকনপন্থি আফতাব সমর্থকরা। এ সময় বেশ কয়েকজনকে মারধর করে তারা।
হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে তারা অবরোধ করলে আবার বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে যান চলাচল। এ সময় শক্তি বৃদ্ধি করে আফতাব সমর্থকদের ওপর পালটা হামলা চালায় তারা। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয় তাদের। দ্বিতীয় দফা হামলার সময় আফতাবের নিয়ন্ত্রণাধীন মালিক সমিতির কার্যালয় ভাঙচুর করে সাদিক অনুসারীরা। কয়েকটি পরিবহণের কাউন্টারও ভাঙচুর করে তারা।
আফতাব হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের বিতর্কিতদের দিয়ে মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ জানালে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সাদিকপন্থি লোকজন। পালটা বক্তব্যে লিটন মোল্লা বলেন, আমরা শ্রমিক লীগের কমিটির বিষয় নিয়ে এখানে আসিনি। পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনসহ ৬ দফা দাবি জানাতে টার্মিনালে এসেছিলাম। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই আফতাব হোসেন ও তার লোকেরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আলী আশ্রাফ ভূঁইয়া বলেন, দুগ্রুপের মধ্য অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। আমরা নেতাদের বলেছি দ্বন্দ্ব দূর করতে। দুপক্ষের শ্রমিকদের বাস টার্মিনাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নথুল্লাবাদের পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।