নির্বাচনের আগে জাতীয়করণ নয় : শিক্ষামন্ত্রী
গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল, বার্ষিক পরীক্ষা নভেম্বরে
আলোচনা ব্যর্থ, শিক্ষকরা আন্দোলনেই
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে শিক্ষা কার্যক্রমে কয়েকটি পরিবর্তন এনেছে সরকার। বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বরের পরিবর্তে নভেম্বরে নেওয়া হবে। পরীক্ষা এগিয়ে আনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকবে না। এখন যথারীতি শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। শীতকালীন ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেওয়া হবে। রোববার গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল, যা ২ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার পরিকল্পনা নেই। ঘূর্ণিঝড় মোখা, বন্যা ও দাবদাহের কারণে একাধিকবার বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ কারণে এসব বিদ্যালয়েও গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেওয়া হবে না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থানকারী শিক্ষকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বুধবার বিকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) আলোচনাকালে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সম্ভব নয়। আর তার এমন ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষকরা। ফলে শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দাবির প্রসঙ্গে জানান, তাদের দাবি বিবেচনার জন্য দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে, যা আগস্টের শেষ দিকে গঠন করা হবে। তখন শিক্ষক নেতারা ওই কমিটিতে প্রতিনিধি রাখা এবং কমিটির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ উৎসব, বাড়ি ও চিকিৎসা ভাতা দাবি করেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী সাফ ‘না’ বলে দেন।
পরে বৈঠক শেষে শিক্ষকরা অবস্থানস্থলে ফিরে সাধারণ শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয় অবহিত করেন। তখন শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পাশাপাশি তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের দাবি তোলেন। তার সঙ্গে আলোচনা শেষেই শিক্ষকরা বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান।
জানা গেছে, বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, আজ হিজরি নববর্ষ উপলক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে। কিন্তু রোববার থেকে ছুটির পরিবর্তে নিয়মিত ক্লাস হবে। এই গ্রীষ্মকালীন ছুটি ডিসেম্বরে শীতকালীন ছুটির সঙ্গে সমন্বয় হবে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা নভেম্বরের মধ্যেই শেষ করা হবে।
শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে দশম দিনের মতো বুধবার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।
সকাল থেকে কর্মসূচি চলছিল। কিন্তু দুপুর ২টার অবস্থানস্থলে খবর আসে শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত
শিক্ষকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এতে এক ধরনের আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। পরে বেলা সাড়ে ৩টার পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ওই কমিটি দুটির একটি হবে জাতীয়করণে অর্থসংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত বা অর্থনৈতিক; অপরটি হবে শিক্ষার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. কাওছার যুগান্তরকে বলেন, কমিটির প্রস্তাব করার পর তারা এতে শিক্ষক প্রতিনিধি রাখার দাবি করেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী সাফ না করে দেন। এছাড়া তাকে শিক্ষকদের আরও কিছু ছোটখাটো দাবির কথা অবহিত করা হয়।
এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা, বাড়ি ও চিকিৎসা ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়। এটা শুধু জাতীয়করণের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী এক্ষেত্রে বলেন, নির্বাচনের আগে আর কিছু সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষকদের বক্তব্য হচ্ছে-তাহলে এ আলোচনায় কী পেলাম। আন্দোলনেও প্রাপ্তি শূন্য। তাই এখন বাড়ি ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাই আমরা। অন্তত ৫ মিনিটের সাক্ষাৎ চাই। তার আগে পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে।
আলোচনায় দুই সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধি যোগ দেন। তারা হলেন, বিটিএ’র সহসভাপতি মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. কাওছার।