জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল
ব্যয় বাড়ছে ২৮৪ কোটি টাকা
মিজান চৌধুরী
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় বাড়ছে ২৮৪ কোটি টাকা। শুরুতে এ ব্যয় ধরা হয় ১০৮১ কোটি টাকা। কিন্তু এখন কাজ শেষ করতে প্রয়োজন ১৩৬৫ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক অঞ্চলের আয়তন ৫০৭ একর বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বাড়ছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আজ বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন করা হবে। এর আগে ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। এরপর তাতে অনুমোদন দেন তিনি। পাশাপাশি অতিরিক্ত ব্যয়ের ব্যাপারে অনাপত্তি দিয়েছে দাতা সংস্থা জাইকা। কারণ এই প্রকল্পটি জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সূত্র আরও জানায়, ‘জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপন ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ছাড়াও রাশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, কানাডা থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টন সার আমদানির প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। সব মিলে ১৫টি ক্রয় প্রস্তাব এদিনের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। সেখানে দুকার্গো এলএনএজি আনার সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সূত্র জানায়, জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আয়তন বৃদ্ধি। এ প্রকল্পের জন্য ৪৯১ একর বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে এর আয়তন এক হাজার একর করা হয়। ফলে মূল প্রবেশপথের নকশা, পানি সংরক্ষণ, পুকুর, খাল, পাম্প স্টেশনের ডিজাইন পুনর্বিন্যাস করায় এর ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ক্রয়কার্যের আওতায় আরও ৪১ একর জমির ভূমি উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় সয়েল কন্ডিশন ভালো নয়। যে কারণে ভূমি উন্নয়নের কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে পিভিডি স্থাপনের জন্য অধিক পরিমাণ মাটির প্রয়োজন হয়। প্রাথমিকভাবে ৯৯ একর জমিতে পিভিডি স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন ১৯৮ একর জমিতে তা স্থাপনের প্রয়োজন হচ্ছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বিবেচনায় সীমানা প্রাচীরের ডিজাইনের পরিবর্তন আনতে হয়েছে। প্রাচীরের ওপরে গ্রিল ও কাঁটাতার স্থাপনের কারণে ব্যয় বাড়ছে। এই ব্যয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বেজার পক্ষ থেকে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী সারসংক্ষেপ দেখে অনুমোদন দেন। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনের সদয় সম্মতি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এটি আজ অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মোট ২৫৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ২১২৮ কোটি টাকা। এছাড়া ৪৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। এ প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা ছিল ১০৮১ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুনে এর কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের মাটি ভরাট কাজ ৮২ দশমিক ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের অবকাঠামো কাজ চলমান আছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এ প্রকল্পের জাপানি নাগরিকদের ফেরত নেওয়ায় এর কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরে জাইকার গাইডলাইন অনুযায়ী এর কার্যচুক্তির মেয়াদ ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
জানা গেছে, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত হতে পারে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আনা হবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার। রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক করপোরেশন সার সরবরাহ করবে। কৃষি মন্ত্রণালয় এই সার আমদানি করবে। আরও ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আনা হবে সৌদি আরব থেকে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এবং সৌদি আরবের ‘মা আদীন’-এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আলোকে এই সার আমদানি হবে। বৈঠকে কানাডা থেকে এক লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। কানাডিয়ান কর্মাশিয়াল করপোরেশন এবং বিএডিসির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আলোকে এই সার আনা হবে। এছাড়া কাতার থেকে আনা হবে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার । দুটি লটে এই সার সরবরাহ করবে কাতার কর্মাশিয়াল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (মুনটাজাত)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি থেকে পৃথক দুটি লটে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবও সেখানে তোলা হবে।
ওই বৈঠকে জ্বালানি তেল, স্পর্ট মার্কেট থেকে ২ কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব তোলা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বাড়ানো আইনের আওতায় এই এলএনজি আমদানি করা হবে। এছাড়া নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের আওতায় ৪টি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।