জিআই স্বীকৃতি পেল বগুড়ার দইসহ ৪ পণ্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
বগুড়ার বিখ্যাত সরার দই ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম এবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২৬ জুন শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। একইদিন শেরপুরের তুলসীমালা ধান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আমকেও জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দেশের ১৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল।
জানা যায়, প্রায় ১৫০ বছর আগে বগুড়া জেলার শেরপুরের নীলকণ্ঠ ঘোষের মাধ্যমে এ দইয়ের উৎপাদন শুরু হয়। পরে নওয়াব আলতাফ আলী চৌধুরীর (পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর বাবা) পৃষ্ঠপোষকতায় গৌর গোপাল পাল নামে এক ব্যক্তি বগুড়া শহরে এ দইয়ের উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে নওয়াববাড়ি রোডে তার দুই ছেলে ‘শ্রী গৌর গোপাল দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডার’-এর মালিক বিমল চন্দ্র পাল ও স্বপন চন্দ্র পাল সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বগুড়া রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির আবেদনের ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই শেষে বগুড়ার দইকে জিআই হিসাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তুলসীমালা ধান, ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নির্দেশনা অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) জিআই পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দেশের প্রথম জিআই পণ্য হিসাবে নিবন্ধন পায় জামদানি। এরপর একে একে স্বীকৃতি পায় ইলিশ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম। নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হলো এ চার পণ্য।
এদিকে দইকে স্বীকৃতি দেওয়ায় বগুড়াতে আনন্দের বন্যা। এ খবরে শুধু হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি নয়; সারা জেলার মানুষের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে। বগুড়া জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আকবরিয়া গ্রপের চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল জানান, বগুড়ার দইকে জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিতে তারা ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর ডিপিডিটিতে আবেদন করেন। আবেদনের ছয় বছর পর স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। এ জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমেরিকা, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ বগুড়ার সুস্বাদু দইয়ের স্বাদ আস্বাদন করেছেন। এখন জিআই পণ্যের মর্যাদা পাওয়ায় রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলো। তবে এ জন্য শুল্ক কর সহজ, রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা আশা করি সরকার বিদেশি মুদ্রা অর্জনের স্বার্থে সে সুযোগ দেবে। রেস্তোরাঁ মালিকরা আশা করেন, শিগগিরই ট্যারিফ লাইনেও বগুড়ার দইয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে।