ভারতীয় গরু আসছে না ৯ বছর
কুরবানির পশু এবারও উদ্বৃত্ত থাকবে ২৫ লাখ
সারা দেশে ৪ হাজার ৩৯৯টি ও রাজধানীতে বসেছে ২০টি হাট * দেশে ছোট-বড় ১৮ লাখ গরুর খামার রয়েছে-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
শিপন হাবীব ও হুমায়ুন কবির
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
দেশে একসময় কুরবানির ঈদে পশুর সংকট ছিল। ভারত থেকে আসত গরু। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। সারা দেশে গড়ে উঠেছে বহু গবাদিপশুর খামার। বিভিন্ন শহরে এমনকি রাজধানীতেও পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। এতে সারা বছর মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কুরবানির ঈদের চাহিদাই শুধু পূরণ হচ্ছে তা নয়, গেল তিন ঈদে পশু উদ্বৃত্ত থেকে গেছে প্রায় ৭৫ লাখ। এবারও প্রায় ২৫ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
এদিকে রাজধানীতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২০টি পশুর হাট বসেছে। শুক্রবার এসব হাটে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক ও পিকআপে গরু, মহিষ ও ছাগলসহ গবাদিপশু ঢুকছে। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমে উঠেছে হাট। খামারিরা বলছেন, খাদ্যের দাম বাড়ায় এবার পশুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, এবার গত ঈদের চেয়ে আরও বেশি পশু বাজারে উঠবে। গত বছর ৯৯ লাখ গরুর চাহিদার বিপরীতে ১ কোটি ২১ লাখ পশু মজুত ছিল। এবার প্রায় ১ কোটি পশুর চাহিদার বিপরীতে পশু রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখেরও বেশি। তিনি বলেন, এবার পশুর মাংসের কোয়ালিটি খুবই ভালো হবে। খামারিরা গবাদিপশুকে সবুজ ঘাস খেতে দিয়েছে। পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রায় ৯ বছর ধরে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় ঈদকে টার্গেট করে ব্যক্তি উদ্যোগে কিংবা খামারে পশু পালন করা হচ্ছে। ভারত সরকার ২০১৪ সালে বাংলাদেশে গরু প্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায়। মূলত তখন থেকেই দেশে খামারি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র কৃষক গরু পালনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৯ সালে কুরবানির ঈদে প্রায় পৌনে ১২ লাখ পশু উদ্বৃত্ত ছিল। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ লাখে। ২০২১ সালে তা আরও সাড়ে ৩ লাখ বেড়ে হয় সাড়ে ২৭ লাখ। ২০২২ সালে উদ্বৃত্ত ছিল ২২ লাখ। এভাবে গেল তিন ঈদে কুরবানির পশু উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ৭৫ লাখ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে মৎস্য ও পশু উৎপাদনে বিপ্লব ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা ও সহায়তায় এ খাতের উন্নয়ন দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে এখন ছোট-বড় প্রায় ১৮ লাখ গরুর খামার রয়েছে। প্রতিনিয়ত উৎপাদন বাড়ায় মাছ ও মাংসে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। ভারত থেকে কোনো পশু আসছে না। চাহিদার তুলনায় বেশি পশু হাটে উঠছে। ফলে উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান যুগান্তরকে বলেন, এবার পশুর দাম কিছুটা বাড়তি থাকবে। কারণ, পশু খাদ্যের তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি খাদ্যের দাম বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অতিরিক্ত দাম দিয়ে পশু খাদ্য কিনতে হচ্ছে। ফলে খামারি কিংবা ব্যক্তিমালিক পর্যায়ে পশু লালন-পালন করতে খরচ বেশি পড়ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পশুর হাট জমে উঠেছে। এবার সারা দেশে মোট ৪ হাজার ৩৯৯টি পশুর হাট বসছে। রাজধানীতে বসছে ১৮টি অস্থায়ী পশুর হাট। এ ছাড়া দুই সিটি করপোরেশনের গাবতলী ও সারুলিয়ায় স্থায়ী দুটি হাটেও পশু কেনাবেচা হচ্ছে।
জমে উঠেছে গাবতলী গরুর হাট : মিরপুর প্রতিনিধি জানান, গাবতলী গরুর হাটে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে বানানো হচ্ছে নতুন নতুন অস্থায়ী শেড। ইতোমধ্যে হাটে ৩ থেকে ৪ হাজার গরু-ছাগল এসেছে। প্রতিনিয়ত ট্রাক ও পিকআপে আরও গরু ছাগল ঢুকছে। ৬টি ওয়াচ টাওয়ারসহ র্যাব পুলিশের জন্য অস্থায়ী শেড রয়েছে।
শুক্রবার মিরপুর ১৩ নম্বরের বাসিন্দা আরিফ মৃধা বলেন, সকাল থেকে হাট ঘুরে ছোট সাইজের একটি গরু কিনেছি। ৩ মন ওজনের গরুটি তিনি ৮৮ হাজার টাকায় কিনতে পেরে বেজায় খুশি।
আফতাবনগর পশুর হাট : ভাটারা প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খুঁটির সঙ্গে সারি সারি গরু-মহিষ বাঁধা। বিক্রেতারা পশুর পরিচর্যা করছেন। তবে ক্রেতার সংখ্যা কম। হাটের বিভিন্ন স্থানে সতর্কতামূলক ব্যানার। এছাড়া অনলাইন ব্যাংকিংয়ে কীভাবে পশুর মূল্য পরিশোধ করা যাবে সে সংক্রান্ত ব্যানার ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝেমধ্যে মাইকিংও করা হচ্ছে।
পাবনার আতাইকুলা থানার গরু ব্যাপারী আতাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমি ২৩টি গরু নিয়ে এসেছি। এখন মানুষ শুধু দাম জিজ্ঞাসা করে ছবি তুলছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি ১৭টি গরু এনেছি। সব নিজের খামারের। সবচেয়ে বড়টার দাম ছয় লাখ টাকা। সাড়ে পাঁচ লাখ হলে ছেড়ে দেব।
আফতাবনগর হাটের ইজারাদার আব্দুল মান্নান যুগান্তরকে জানান, আমাদের এই হাটে প্রায় ৪০ হাজার গরুর ধারণক্ষমতা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজার গরু হাটে ঢুকে গেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি গরু-মহিষ : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার গরু ও মহিষ পালনে এগিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ। এ বিভাগে এবার কুরবানির উপযোগী গরু রয়েছে ১২ লাখ ৪ হাজার ১০৮টি এবং মহিষ রয়েছে ১ লাখ ৪৯২টি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ। মহিষ পালনে তৃতীয় অবস্থানে আছে বরিশাল বিভাগ।