Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চট্টগ্রামে আট খুনের আসামির অপতৎপরতা

বিদেশে বসেই নিয়ন্ত্রণ আন্ডারওয়ার্ল্ড

Icon

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিদেশে বসেই নিয়ন্ত্রণ আন্ডারওয়ার্ল্ড

চট্টগ্রামের আলোচিত ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মী খুনের মাস্টার মাইন্ড সাজ্জাদ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ মাথায় নিয়ে তিনি ভারতে অবস্থান করছে এবং চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ড ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছেন।

শহরের বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট এলাকায় সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড আবদুল্লাহ আল মামুন চাঁদাবাজি করছেন। পাঁচটি গ্রুপে তার অর্ধশতাধিক সদস্য রয়েছে। চাঁদার টাকা মামুনের হাত ঘুরে ভারতে পলাতক সাজ্জাদের হাতে চলে যাচ্ছে। আর ওই টাকায় সেখানে তিনি বিলাসি জীবনযাপন করছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, চাঁদা দাবির আগে টার্গেট ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন নম্বর ও পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে বাহিনী সদস্যরা। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেলে তারা শিল্প প্রতিষ্ঠান বা বাসা-বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সূত্র জানায়, সাজ্জাদ বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। তবে মামুন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, সাজ্জাদ-মামুন গ্রুপের অপতৎপরতার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। গ্রুপ সদস্যদের কয়েকজনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করেছি। কয়েকজন এখনও কারাগারে। কেউ কেউ জামিনে বেরিয়ে আবার একই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

সূত্র জানায়, পরবর্তী সময়ে সাজ্জাদের হয়ে মামুন পাঁচজনকে চাঁদাবাজির কাজে লাগায়। তারা হলো- ফিরোজ, মুন্না, সরওয়ার ওরফে বাবলা, নূরনবী ওরফে ম্যাক্সন ও মঈনুদ্দিন রাশেদ ওরফে ভাগিনা রাশেদ। তাদের মধ্যে সরওয়ার ও ফিরোজ কারাগারে। এইট মার্ডার মামলা ছাড়াও একটি অস্ত্র মামলায় ২১ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নুরনবী ওরফে ম্যাক্সন গত বছর কলকাতায় আশ্রয়দাতা নারীর হাতে মারা গেছে।

যুগান্তরের হাতে আসা একটি অডিও রেকর্ড বিশ্লেষণ করে জানা যায়-সাজ্জাদের অস্ত্রের ভান্ডার এখন মামুনের নিয়ন্ত্রণে। বেশ কয়েকটি একে-২২, এক নলা বন্দুক, বিদেশি রাইফেল এবং রিভলবারসহ সব অস্ত্র তার হেফাজতে। ফরমায়েশ অনুযায়ী মামুনের বাড়ির দারোয়ানের কাছ থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অস্ত্র সংগ্রহ করে। সাজ্জাদের সাম্রাজ্য পাহারা দিতে শিল্প এলাকাখ্যাত বায়েজিদ ও বিবিরহাটে চাঁদা আদায়ে কিশোর গ্যাং প্রতিষ্ঠা করেন মামুন। সম্প্রতি একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অস্ত্রসহ ধরা পড়লে মামুন সম্পর্কে তথ্য বেরিয়ে আসে। গত বছর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় একটি তোশক কারখানায় আগুন দেওয়ার পর সাজ্জাদের নাম ফের আলোচনায় আসে।

২০০০ সালের ১২ জুলাই চট্টগ্রামে আট ছাত্রলীগ নেতাকর্মী খুন হন। এ হত্যামামলায় নিম্ন আদালত সাজ্জাদকে ফাঁসি দেন। ২০০৪ সালের দিকে তিনি দুবাই পালিয়ে যান। ২০১২ সালে ভারতে তিনি আটক হন। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর তার বাহিনীর উৎপাত দেশে আরও বেড়ে যায়। ওয়াজেদিয়া, চালিতাতলী, হাজীরপুল, চান্দগাঁও এলাকার শমসেরপাড়া, পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট এলাকায় তাদের তৎপরতা বেশি। এসব এলাকায় বাড়ি নির্মাণ, জমি ক্রয়-বিক্রয়, মাটি ভরাট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, শিল্পকারখানা, দোকান-পাট ও পরিবহণ স্ট্যান্ড থেকে তারা চাঁদা আদায় করে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।

২০০২ সালে ভিন্ন নামে জাল পাসপোর্ট করে মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে যায় মামুন। মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নামে করা পাসপোর্টে তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। যদিও তার বাবার নাম মোহাম্মদ ইউনুস। ২০০৭ সালের ৩ আগস্ট জাল পাসপোর্টটিও নবায়ন করা হয়। এরপর দেশে ফিরে তিনি সাজ্জাদের হয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ড।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম