Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সুশাসনবর্জিত উন্নয়ন অব্যাহত রাখার বাজেট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুশাসনবর্জিত উন্নয়ন অব্যাহত রাখার বাজেট

বাজেট বক্তৃতায় গত দেড় দশকের উন্নয়ন অভিযাত্রার সাফল্যগাথা, বিদেশিদের প্রশংসার সারমর্ম স্থান পেয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার কোনো ব্যাখ্যা নেই। স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার স্লোগান দিয়ে নির্বাচনি বছরের বাজেটে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। এতে নানাবিধ সংকটে নিমজ্জিত অর্থনীতিকে উদ্ধারের দায়কে পাশ কাটানো হয়েছে। ব্যয়বহুল সব মেগা প্রকল্প শুরুর বিশাল বহর দেখে বোঝা যায়-সুশাসনবর্জিত উন্নয়ন অব্যাহত রাখতেই এমন বাজেট দেওয়া হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দ ও কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানা কারণে ন্যূনতম কর আহরণের উদ্দেশ্য কখনোই সফল হবে না।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে বক্তব্য দেন আইবিএফবির সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, আইবিএফবির ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, সহসভাপতি এমএ সিদ্দিকী প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে আইবিএফবির সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেন, বাজেটে এমন ব্যক্তিদের ওপর ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করের প্রস্তাব করা হয়েছে-যাদের করযোগ্য আয় না থাকলেও কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। সরকারি সেবা নেওয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ থেকে অতিরিক্ত ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। ন্যূনতম কর আহরণের প্রক্রিয়াটি প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি করবে, জালিয়াতি বাড়বে। উদ্দেশ্য কখনোই সফল হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়-করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবের ওপর দোষ চাপানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, করোনা ও যুদ্ধে সৃষ্ট মন্দা মোকাবিলা এবং অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবিলার সঙ্গে বাজেট সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাজেটের আকার, বরাদ্দ, শুল্ককর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। তবে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া বাজেটের ইতিবাচক দিক। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে না-এ খাতের ব্যয়ের সক্ষমতা ও সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন আছে। সেই জায়গাগুলো চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে।

বাজেটের সার্বিক পর্যালোচনায় আইবিএফবির সুনির্দিষ্ট বেশকিছু বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিমত ও সুপারিশ দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা আত্মঘাতী : বাজেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও সুশাসনের কথা থাকলেও পাচার করা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা আত্মঘাতী। এটি অনৈতিক ও সংবিধানপরিপন্থি। মাত্র ৭ শতাংশ হারে কর প্রদান করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে নিয়মিত করদাতাদের আরও নিরুৎসাহিত করা হবে। কালোটাকা সাদা করার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন। পাচার করা টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে না-এ ধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হলে অর্থনীতিতে নীতি-নৈতিকতার ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বরাদ্দ আরও বেশি হওয়া এবং ১০০ দিনের কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানো উচিত।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ : টেকসই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ছাড়া কোনো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কল্পনা করা যায় না। তাই স্থূল আমদানি নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে বিদেশি-অর্থায়নের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন গতিশীল করা।

রপ্তানি আয় বাড়ানোর বিকল্প : একক পণ্যনির্ভর রপ্তানির পরিবর্তে বিদ্যমান নীতির কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য ব্যবসা-শিল্পের দিকে নীতি সহায়তা প্রসারিত করা উচিত। ব্যবহারকারীবান্ধব প্রক্রিয়া তৈরি করা এবং এ সম্ভাব্য উৎসকে উন্নত করার জন্য আরও জাতীয় তহবিল বরাদ্দ করা।

আমদানি শুল্ক ও ন্যূনতম কর : মোট প্রাপ্তির ওপর স্থির (৫%) ন্যূনতম কর বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকারক হবে। তাই ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য প্রস্তাবটি পুনরায় দেখার অনুরোধ।

আয়কর নীতির বৈচিত্র্য : স্বতন্ত্র করের হার, ছাড়, অব্যাহতি এবং ক্রেডিটগুলোর বিভিন্ন নীতি আয়ের স্তর, আয়ের উৎসের ধরন এবং অন্য সব ব্যক্তিগত পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে করদাতাদের প্রভাবিত করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতি সুপারিশ-করের জাল সম্প্রসারণে আরও মনোযোগ দিতে হবে। একই সময়ে সম্ভাব্য সব স্তরে অটোমেশন গ্রহণ করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ই-পেমেন্ট এবং ই-টিডিএস সিস্টেম এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ইনসেনটিভ চালুর জোর সুপারিশ করা হচ্ছে।

মাথাপিছু দায় হ্রাস করা : উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ বা শর্তযুক্ত বাজেট সাপোর্ট সংগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিচক্ষণ ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল গ্রহণের সুপারিশ করা হচ্ছে। এতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আর্থিক শৃঙ্খলা বাড়বে।

জলবায়ু কেন্দ্রীভূত প্রকল্প : পরিবেশবিরোধী ও সবুজ অর্থনীতির ধারণার বিরোধী সব প্রকল্প পরিত্যাগ করা উচিত। জলবায়ু ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। কেননা বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনিয়মিত আবহাওয়ার নিদর্শন অনুভব করছে। স্মার্ট বাংলাদেশে বিনিয়োগ শুধু অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, এটি একটি নৈতিক বিষয়। অবকাঠামো, শিক্ষা, প্রযুক্তি, জ্বালানি এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে তাই সঠিক বরাদ্দ দেওয়া উচিত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম