Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাজশাহী সিটি নির্বাচন

প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার নীরব প্রশাসন

সমাবেশসহ আচরণবিধি ভঙ্গের হিড়িক

Icon

আনু মোস্তফা, রাজশাহী

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার নীরব প্রশাসন

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের আগে গোটা নগরী পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। ভোট চেয়ে দেওয়ালে দেওয়ালে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। সমাবেশ করাসহ আচরণবিধি ভঙ্গের হিড়িক চলছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন মোটরসাইকেলের বিশাল শোডাউন করেছেন অধিকাংশ প্রার্থী।

২ জুন প্রতীক বরাদ্দের আগেই অনেক প্রার্থী প্রতীকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টার ছেড়েছেন। ভোট চেয়ে অনলাইনমাধ্যমে কেউ কেউ জিঙ্গলসহ ভিডিও প্রচার করছেন। অনেকে আবার অনলাইন পত্রিকায় প্রচার করছেন বিজ্ঞাপনও। তবে এখন পর্যন্ত অসদাচরণের জন্য কোনো প্রার্থীকে সতর্ক করেননি রিটার্নিং অফিসার। আচরণবিধি তদারকিতে নির্বাচন কর্মকর্তারাসহ স্থানীয় প্রশাসন উদাসীন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী তৌহিদুল হক সুমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ঠেলাগাড়ি’ প্রতীকের ছবি দিয়ে পোস্টার ছেড়েছেন। ওয়ার্ডটির বিভিন্ন এলাকায় ব্যানার দেওয়া হয়েছে। পোস্টারে লেখা-১৯নং ওয়ার্ডবাসীর সেবা করার জন্য তৌহিদুল হক সুমনকে ‘ঠেলাগাড়ি’ মার্কায় ভোট দিন। ২০১৮ সালে সুমন ঠেলাগাড়ি প্রতীকে ভোট করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি ঠেলাগাড়ি প্রতীক চেয়েছেন।

তৌহিদুল হক সুমন বলেন, এ ওয়ার্ডে আর কোনো প্রার্থী ঠেলাগাড়ি প্রতীক চাননি। আমি একাই চেয়েছি। সুতরাং আমি ঠেলাগাড়ি পাব-এটা নিশ্চিত। এ কারণে সামাজিক মাধ্যমে ঠেলাগাড়ি প্রতীকে ভোট চেয়েছি। এটা আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না, আমার জানা নেই। ৭ মে ১৮নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পচা মনোনয়নপত্র উত্তোলনে নির্বাচন অফিসে যান মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে। এ সময় পচার সমর্থকরা বিশেষ ধরনের রঙিন টি-শার্ট ও ট্রাউজার পরে শোডাউনে অংশ নেন।

পচা এ শোডাউনে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদেরও অংশ নিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী জুয়েল রানা টিটুও মোটরসাইকেল র‌্যালি করে মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেন। একইভাবে ১১ মে ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটোও মনোনয়নপত্র উত্তোলন এবং ২১ মে দাখিলের দিন মোটরসাইকেল শোডাউন করেন। এরপর ওয়ার্ডে ফিরে তিনি সমাবেশ করেন। নুরুজ্জামান টিটো জানান, একে শোডাউন বলা যায় না। কিছু সমর্থক ছিল তার সঙ্গে। এলাকায় এলাকায় তিনি নিয়ম মেনে গণসংযোগ করছেন।

এদিকে ২১ মে ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন মোটরসাইকেল শোডাউনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এদিন সকালে শতাধিক মোটরসাইকেলের একটি র‌্যালি নগরীর ষষ্টিতলাসহ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর বেরিয়ে এসে নির্বাচন অফিসের প্রধান ফটকে মোমিন সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

মোমিনের ওইদিনের শোডাউনের জিঙ্গল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সমর্থকরা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোমিন জানান, তার কিছু সমর্থক মোটরসাইকেল নিয়ে পাড়া মহল্লায় একটু ঘুরেছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। এটিকে সমাবেশ বলা যায় না। এতে আচরণবিধি ভঙ্গ হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।

অন্যদিকে ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেল ২ মে মনোনয়নপত্র উত্তোলন এবং ২১ মে দাখিলের দিন এলাকায় বড় শোডাউন করেছেন। গত নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। অবশ্য এলাকায় এলাকায় মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে রুবেল ভোট চাইছেন-এমন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে জহিরুল ইসলাম রুবেল রাজি হননি। একটি অনলাইন পোর্টালে ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হামিদুল হক সুজন রঙিন বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোট চেয়েছেন। আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতীক পাওয়ার আগেই পাড়া-মহল্লায় সমাবেশ করছেন বলে অভিযোগ এসেছে।

রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন জানান, সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ১১ উপধারা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র উত্তোলন বা দাখিলের সময় কোনো মিছিল শোভাযাত্রা, শোডাউন ও সমাবেশ করা যাবে না। একই ধারায় আরও বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দিতে পারবেন না। নির্বাচনি আইন অনুযায়ী এসব কর্মকাণ্ড দণ্ডনীয় অপরাধ। তিনি আরও বলেন, তবে এখন পর্যন্ত তারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ পাননি। পেলে ব্যবস্থা নেবেন।

২১ জুন রাসিকে ভোটগ্রহণ হবে। ১ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। ৩ জুন থেকে প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে পারবেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম