Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মূল্যস্ফীতির বড় প্রভাব

চাপের মুখে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি

সময়ের আগেই শেষ ওএমএস’র লক্ষ্যমাত্রা, নতুন করে আরও ২ লাখ ৪০ হাজার টন বরাদ্দ

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাপের মুখে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি

মূল্যস্ফীতির প্রভাবে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে ওএমএসসহ গরিব মানুষের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিগুলো। এর মধ্যে বছর শেষের আগেই ওএমএস’র চাল বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

বিগত বছরগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। অর্থবছরের শুরুতে তিন লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এই কর্মসূচির আওতায় বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ইতোমধ্যে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন বিতরণ হয়েছে।

আগামী জুন পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যেতে আরও ৪০ হাজার টন চালের প্রয়োজন। সব মিলে বছর শেষে পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টনে দাঁড়াবে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন বরাদ্দ বাড়ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমিয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ খাতের আকার বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সূত্র আরও জানায়, চাহিদার প্রেক্ষিতে ওএমএসসহ ১৩টি কর্মসূচিতে মোট খাদ্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ লাখ ৯৫ হাজার টন থেকে বাড়িয়ে ৩২ লাখ ৮১ হাজার টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ওপি খাতে তিন হাজার টন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৮৯ হাজার টন, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) আশ্রয়ণ কর্মসূচিতে ১০ হাজার টন, দুস্থদের খাদ্য সহায়তা প্রকল্প (ভিজিএফ) ত্রাণে এক লাখ মেট্রিক টন, ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচিতে এক হাজার টন রয়েছে। তবে কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসাবে ইপি (রেশন) কর্মসূচিতে ১২ হাজার টন, চা শ্রমিকদের কর্মসূচিতে চার হাজার টন, কাবিখা ভূমিতে এক হাজার টন এবং গম বরাদ্দ ২৮ হাজার মেট্রিক টন কমানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির আকার বছরের মাঝামাঝি এসে বাড়ানোর ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কারণ এর সঙ্গে আর্থিক ব্যয় জড়িত। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত দুই লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল বিতরণের অনুমোদন চেয়ে অর্থ বিভাগের চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয় দুই লাখ মেট্রিক টনের। বাকি ৪০ হাজার টনের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন আছে।

জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, চলতি অর্থবছরে ওএমএস চালের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ছিল। ইতোমধ্যে পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের বেশি বিতরণ করা হয়েছে। অবশ্য এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে করা হয়। মূল্যস্ফীতির প্রভাব আছে। দ্রব্যমূল্যও বেড়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে যেন অসহায় মানুষ চাল পায়। এ জন্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টন ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু মে ও জুন মাস পর্যন্ত কর্মসূচি চালাতে আরও ৪০ হাজার টন চালের প্রয়োজন হবে। সব মিলে ওএমএস খাতে পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টন চালের প্রয়োজন হবে। অন্যান্য কর্মসূচির ব্যাপারেও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরি যুগান্তরকে বলেন,গরিব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরাসরি খাদ্য বিতরণের একটি মাধ্যম ওএমএস। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে এই কর্মসূচি একটি ভূমিকা রাখতে পারে। তবে বিতরণ ব্যবস্থায় সমস্যা আছে। এই কর্মসূচির চাল সংগ্রহ করতে যে কষ্ট করতে হয় তা দেখে এটি মানবিক বিতরণ ব্যবস্থা মনে হয় না। মনে রাখতে হবে এটি অস্থায়ী সমাধান। এক্ষেত্রে বিতরণ ব্যবস্থা ভালো করতে হবে। বিশেষ করে নির্বিঘ্নে এবং সুষ্ঠু বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে এই কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাজারে দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়েছে। সে কারণে মূল্যস্ফীতির হার অস্বাভাবিক বিরাজ করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) হিসাবে গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাসে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। তা মোকাবিলায় বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে ওএমএসসহ স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির ওপর। কারণ ওএমএস কর্মসূচির আওতায় একজন মাথাপিছু পাঁচ কেজি চাল এবং পাঁচ কেজি আটা পাচ্ছেন। এই চালের প্রতিকেজি মূল্য ৩০ টাকা এবং আটা ৫৫ টাকা। যদিও খোলা বাজারে এক কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দরে এবং এক কেজি ময়দা ৬৫ টাকা। বাজারমূল্য থেকে ওএমএস চাল কেজিতে ২০ টাকা এবং ময়দা ১০ টাকা কম পাচ্ছেন সুবিধাভোগীরা। বাজারে চাল ও আটার অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে ওএমএস কর্মসূচির চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। গরিব মানুষ এই চাল কেনার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধান কমিটি (এফপিএমসি) বৈঠকে ওএমএস কর্মসূচিতে চাল বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টন নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি গম বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৭৫ হাজার টন থেকে কমিয়ে তিন লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়। গমের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, যেহেতু চাল বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে এ জন্য গমের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা হ্রাস করা হয়। তবে চাল ও গম মিলে মোট বিতরণের পরিমান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।

এফপিএমসি বৈঠকে উত্থাপিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলতি অর্থবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আর্থিক খাতে চাল বিতরণ করা হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন। এ খাতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টন। একইভাবে দেখা গেছে গম বিতরণ হয়েছে ৩ লাখ মেট্রিক টন। এই সময়ে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১৮ হাজার টন।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, একদিকে খাদ্যের দাম বেড়েছে এবং মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। বিশেষ বিচেনায় এ বছর খাদ্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়। তবে আগামী অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা কমবে। কারণ চলতি অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসে বলা হয় বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যাভাবে পড়বে। এই আশঙ্কার প্রেক্ষিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এখন আমন উৎপাদন ভালো হয়েছে। বোরো উৎপাদন ভালো। খাদ্য পর্যাপ্ত থাকলে আগামী অর্থবছরে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য প্রয়োজন হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম