আড়াই দিন বন্ধ থাকার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিং শুরু
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে আড়াই দিন বন্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। এরই মধ্যে ফিরে এসছে কর্মচাঞ্চল্য। পুরোদমে শুরু হয়েছে জাহাজ চলাচল ও পণ্য লোডিং-আনলোডিং। গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেওয়া মাদার ভেসেলগুলোকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে জেটিতে। এগুলো থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে। বহির্নোঙরে অবস্থানরত মাদার ভেসেলগুলো থেকেও পণ্য খালাস শুরু হয়েছে। এদিকে ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সোমবার সকাল ৬টা থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হয়েছে। শুরু হয়েছে বিমান ওঠানামা।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, আড়াই দিন পণ্য হ্যান্ডলিং বন্ধ থাকায় বন্দরে আগের মতো দীর্ঘমেয়াদি জাহাজজট সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। তবে সাময়িক সময়ের জন্য চাপ সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। কেননা আরও নতুন জাহাজ আসছে বন্দরে। আগের জাহাজগুলোর লোডিং-অনলোডিং বিলম্বিত হওয়ায় পাইপলাইনে থাকা জাহাজগুলো বার্থিং পেতে কিছুটা সময় লাগবে। এভাবে একটি চেইন এফেক্ট দেখা দিতে পারে।
মোখার প্রভাবে আবহাওয়া অধিদপ্তর ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারির পর শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জারি করা হয় বন্দরের নিজস্ব সর্বোচ্চ অ্যালার্ট-৪। ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করায় রোববার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলে। এর পরপরই বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ প্রত্যাহার করে বন্দর কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেয়। তবে পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবকি হতে শুরু করে সোমবার সকাল থেকে। বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া ১৭টি জাহাজকে বিভিন্ন জেটিতে ফিরিয়ে আনা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, রোববার রাত থেকে আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। সোমবার ভোর সাড়ে ৪টায় কর্ণফুলী নদীর প্রথম জোয়ারে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া জাহাজগুলো একে একে ফিরিয়ে আনা হয় মূল জেটিতে।
তিনি বলেন, জাহাজের তেমন কোনো চাপ তৈরি হবে না। কারণ, এখন জাহাজ আসামাত্রই বার্থিং পাচ্ছে। কোনো জট নেই।
অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার সময় বন্দরের জেটিতে ২০টি এবং বহির্নোঙরে ৬০টিসহ ৮০টি জাহাজ ছিল বলে তখন জানিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে জেটিকে নিরাপদ রাখতে সেখানে অবস্থানরত ২০টি জাহাজও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বহির্নোঙরে।
কার্যক্রম ফের শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ যুগান্তরকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মেনে নিতেই হবে। এক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কারও দায় নেই। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম যখন বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন জাহাজের ওয়েটিং টাইম তেমন বেশি ছিল না। জাহাজ আসার একদিন পরই বার্থিং পেয়েছে। এই আড়াই দিনে পণ্য নিয়ে আরও কয়েকটি জাহাজ বন্দরে ভেড়ার কথা। এক্ষেত্রে আগে অবস্থান করা জাহাজগুলোর পণ্য খালাসের পর তাদের বার্থিং পেতে কিছুটা বিলম্ব ঘটতে পারে। তবে এটা তেমন বড় সমস্যা নয়। আগের মতো দীর্ঘমেয়াদি জাহাজজট সৃষ্টি হবে না। কিছু সময়ের জন্য হয়তো বন্দরের ওপর একটা চাপ তৈরি হবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় থাকা পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে দুটিসহ তিনটি বাড়তি জাহাজ বার্থিং দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তাহলে একটা পর্যায়ে ওয়েটিং টাইম আবার আগের ভালো অবস্থানে চলে আসবে। বন্দর বন্ধ থাকায় বেশ কিছু দিন একটা চেইন এফেক্ট মোকাবিলা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে রপ্তানি পণ্য সময়মতো পাঠাতে পারেননি। এখন তারা সেই পণ্য পাঠালে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে গিয়ে যদি মাদার ভেসেল ধরতে না পারে, তাহলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। আবার অনেক শিল্পকারখানা এই আড়াই দিন আমদানীকৃত কাঁচামালের সরবরাহ পায়নি। এসব প্রতিষ্ঠানকেও কিছু ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, বন্দর বন্ধ থাকায় প্রায় ২ হাজার ৮০০ রপ্তানি কনটেইনার জমে গিয়েছিল বিভিন্ন ডিপোতে। তবে সোমবার সকাল থেকে শিপমেন্ট শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সচল : ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সোমবার সকাল ৬টা থেকে ফ্লাইট ওঠানামার অনুমতি দেয় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিমানবন্দরে দায়িত্বরত পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, অনুমতি দেওয়ার পর আজ (সোমবার) সকাল পৌনে ৭টার দিকে আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট অবতরণ করে। তিনি বলেন, বিমানবন্দর বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় ফ্লাইট অপারেটররা তাদের ফ্লাইট রিশিডিউল করেছেন। কোনো ফ্লাইট বাতিল হয়নি। যারা গত দুই দিনে বিদেশ যেতে পারেননি, তারা রিশিডিউল অনুযায়ী যাবেন। ফ্লাইট অপারেটররা এ বিষয়গুলো হ্যান্ডল করে থাকেন। ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের আশঙ্কায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শনিবার ভোর ৬টা থেকে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।